//বিশেষ প্রতিবেদক//
মেজ বোনের জেএসসির সনদপত্র নিয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে এক লাফে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় খুর্শিদা আক্তার ওরফে লাকি আক্তার। তিনি এখন যশোরের ডাক্তার মেজবাহ উর রহমান মেডিকেল টেকনোলজি কলেজে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং টেকনোলজিতে অধ্যয়নরত, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ৭৫০১০০১৬০৪, সেশন: ২০১৯-২০।
বর্তমানে খুর্শিদা আক্তার নাম এবং দু’দফায় জন্মনিবন্ধন এবং নতুন করে জাতীয় পরিচয়পত্র করার চেষ্টা করছে।
প্রতারণা ঘটনার শুরু বাগেরহাটের মোংলাতে। খুর্শিদা আক্তার ও মেজ বোন লাকি আক্তার দু’জনই বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট পৌর এলাকার শফিক হালদারের মেয়ে। যাদের বর্তমান বৈবাহিক ঠিকানা যশোরের মণিরামপুর উপজেলার কামালপুর গ্রামে।
খুর্শিদা আক্তারের প্রকৃত জন্ম তারিখ ১৯৯৬ সালের ১ জুন। তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ১৯৩৩১৫১১০০ এবং জন্মনিবন্ধন নম্বর ১৯৯৬০১৫৮৬৪০১০০৯১২, সে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন।
অপরদিকে মেজবোন লাকি আক্তার লেখপড়া করেছেন ১১৪৯৯৮ চাঁদপাই মেশেরশাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে, যার জেএসসি রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১১১৩৩৩৫৭৫৩, সেশন ২০১১ এবং রোল নম্বর ছিল ২৪১৭৫১।
খুর্শিদা আক্তার তার মেজ বোন লাকি আক্তারের জেএসসির সনদপত্র নিয়ে আলহাজ শেখ আফসার উদ্দিন মহিলা দাখিল মাদ্রাসা হতে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে একজন শিক্ষক ও সুপারের সহায়তায় অবৈধভাবে এসএসসি পাস করেন, যার রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ১১১৩৩৩৫৭৫৩, সেশন-২০১৬-১৭, এদিকে, মেজ বোন লাকি আক্তার বড় বোনকে তার সনদপত্র (জেএসসির) সরবরাহ করায় নিজের নাম ও জন্ম তারিখ পরিবর্তন করেছেন। এখন দু’বোনই চেষ্টা করছেন নতুন করে জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তনের জন্য। মেজ বোন লাকি আক্তার নাম পরিবর্তন করে হয়েছেন কথা আক্তার লাকি। তার প্রকৃত জন্ম তারিখ ১৯৯৮ সালের ১ জুন। জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে ১৯৯৯ সালের ৫ আগস্ট করেছেন। তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধনে ১৯৯৯ সালের জন্ম তারিখ ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ তথ্য গোপনের পর কথা আক্তার লাকি নামের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ১৯৬৫৬৩১৯০১ এবং জন্ম নিবন্ধন নম্বর ১৯৯৯০১২৫০০১০৬২০০২। এখন দু’বোনের মধ্যে মেজ বোন জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধন করতে পারলেও নানা কারণে আটকে রয়েছেন বড় বোন খুর্শিদা আক্তার। তিনি তার জাতীয় পরিচয়পত্র মেজ বোন লাকি আক্তারের নাম বসিয়ে পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন অফিসে আবেদন করেছেন।
সূত্র বলছে, তথ্য গোপন করে খুর্শিদা আক্তার পরবর্তীতে লাকি আক্তার নামে জন্মনিবন্ধন করেন, যার নম্বর ০১৯৮০১২৫০০১০৬২০০৩। এবং লাকি আক্তার নাম পরিবর্তন করে কথা আক্তার লাকি নামে যে জন্ম নিবন্ধন করেন তার নম্বর ১৯৯৯০১২৫০০১০৬২০০২। তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, দু’টি জন্ম নিবন্ধনের নম্বরই পরপর। ফলে দু’বোনই যে প্রতারণা করেছেন সেটি স্পষ্ট হয়েছে।
এদিকে ডাঃ মেজবাহ উর রহমান মেডিকেল টেকনোলজি কলেজের অধ্যক্ষ খুর্শিদার নিকট হতে মোটা টাকা অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয় এবং খুর্শিদা আক্তারকে দ্রুত এনআইডি কার্ড সংশোধন করতে বলেন। কিন্তু খুর্শিদা এনআইডি কার্ড সংশোধনে ব্যর্থ হলে অধ্যক্ষ মহোদয় খুর্শিদাকে দিয়ে https://gamitisa.com/tools/bd-oldnidcard লিংক ব্যবহার করে জালিয়াতি করে ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরি করিয়ে নেন এবং সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে গলাবাজি করছেন। এবিষয়ে নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, সে একের পর মিথ্যা তথ্য দিয়ে এনআইডি কার্ড সংশোধন চেষ্টা করে আসছিলেন, কিন্তু সরোজমিনে তদন্তপূর্বক এটি সংশোধন যোগ্য নয় বলে বাতিল করা হয়েছে।
একের পর এক জালিয়াতি করেও বহাল তবিয়তে নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে সে তার কার্যছক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা দেখার কেউ নেই, এবং বারবার অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। এভাবে এরা একসময় হয়ত সরকারী চাকুরিও করবে, প্রশ্ন এসে যায় দেশ-জাতি এদের কাছ থেকে কি আশা করবে…? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজ ও অসাধু কর্মকর্তারা কি এভাবেই জালিয়াতি ও দুর্নীতি করে যাবে…?
Like this:
Like Loading...