//নিজস্ব প্রতিবেদক//
বাগেরহাটে গ্রাহকদের দেড় কোটি টাকা নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের যাত্রাপুর বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামান পালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার দুপুর থেকে গ্রাহকেরা সদর উপজেলার যাত্রাপুর বাজারের অবস্থিত ব্যাংকটির কার্যালয়ে ভিড় করেন। এ সময় অনলাইনে নিজের হিসাবে টাকা না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। হাদিউজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে টাকা আদায় করার জন্য এজেন্ট ব্যাংকিং ইনচার্জ ও অন্য কর্মচারীদের কাছে দাবি জানান তাঁরা।
এ ঘটনায় হাদিউজ্জামান ও তাঁর পরিবারের লোকজন কয়েক দিন ধরে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। একাধিকবার কল করে হাদিউজ্জামানের মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
ইসলামী ব্যাংক বাগেরহাট শাখার ব্যবস্থাপক শেখ তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা বাগেরহাট মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। অভিযুক্ত উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
শেখ তরিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এখানে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন করতে হয়। বিষয়টি ব্যাংক উদ্বোধনের সময় আমরা বলেছি। এ ছাড়া ব্যাংক কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শনে গিয়েও গ্রাহকদের জানিয়েছেন। উদ্যোক্তারা প্রতারণার মাধ্যমে জমা স্লিপ দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে উদ্যোক্তাদের ব্যাংকের স্লিপ ব্যবহার করার কোনো নিয়ম নেই। গ্রাহকদের মধ্যেও কেউ কেউ অতিরিক্ত লাভের জন্য তাঁকে টাকা দিয়েছেন।’ ভবিষ্যতে এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকদের এই ধরনের লেনদেন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন তিনি।
গ্রাহকদের দাবি, ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ওই শাখায় টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন তাঁরা। ব্যাংক থেকে জমা রসিদও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকের উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামান এই টাকা মূল শাখায় জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেন।
এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার ইনচার্জ মো. আবদুল হালিম বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে শাখাটি খোলা হয়। তানিশা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাদিউজ্জামান এটি নেন। আমাদের ২ হাজার ৬০০ জনের মতো গ্রাহক রয়েছেন, যাঁদের ডিপোজিটের পরিমাণ ৬ কোটি টাকার ওপরে। এসব গ্রাহকের জমা দেওয়া টাকা আমরা নিয়মানুযায়ী ব্যাংকে জমা দিয়েছি। কিন্তু কিছু গ্রাহকদের টাকা ব্যাংকের উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামান নিজে নিয়ে অন্য খাতে ব্যয় করেছেন। এই টাকার বিপরীতে উদ্যোক্তা নিজে ও আমাদের দিয়ে গ্রাহকদের ব্যাংকের স্লিপ দিয়েছেন।’
হাদিউজ্জামানের নেওয়া গ্রাহকদের টাকার পরিমাণ দেড় কোটির মতো হতে পারে জানিয়ে আবদুল হালিম আরও বলেন, ‘হাদিউজ্জামান দুই মাস ধরে ব্যাংকে আসেন না। গ্রাহকেরা টাকা নিতে এলে অন্য গ্রাহকদের টাকা দিয়ে সমন্বয় করতে বলেন। আমরা সেভাবেই করেছি। সর্বশেষ কয়েক দিন আগে অনেক চেষ্টা করে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব জমি বিক্রি করে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করে দেবেন।’
সাবানা বেগম নামের এক নারী গ্রাহক বলেন, ‘সাড়ে চার লাখ টাকা রেখেছিলাম ব্যাংকে। এই টাকার লাভে আমার সংসারের বেশির ভাগ খরচ চলত। কিন্তু ব্যাংকে এসে জানলাম, আমার হিসাবে কোনো টাকা জমা নেই। আমাদের অন্য কোনো আয় নেই। স্বামী পঙ্গু। হাঁটতে পারেন না। এখন আমাদের সংসার কীভাবে চলবে ভেবে পাই না।’
যাত্রাপুর এলাকার মনোয়ারা বেগম, তাঁর চাচা ও ফুফু মিলে ২৩ লাখ টাকা রেখেছেন ব্যাংকটিতে। মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আজ এসে ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে দেখি, হিসাবে কোনো টাকা নেই। এত টাকা হারিয়ে পরিবারের সবাই এখন খুবই চিন্তিত। কী হবে জানি না।’
বাগদিয়া এলাকার আজিজুল হক নামের একজন কৃষক ৫০ হাজার টাকা রেখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এসে শুনছি, টাকা নেই। এভাবে হলে কীভাবে আমরা টাকাপয়সা সঞ্চয় করব?’
