নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় এর আদ্যোপান্ত

//বিশেষ প্রতিবেদক//

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর বুকে গড়ে ওঠা সর্বপ্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সবচেয়ে প্রাচীন উচ্চ শিক্ষা কেন্দ্র।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় কে ধ্বং-স করেছিলো?

ঐতিহাসিক বিচারে নির্মোহ সত্যান্বেষণ।।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, গুপ্ত সাম্রাজ্য তথা ভারতীয় উপমহাদেশের এক সুপ্রাচীন নিদর্শন এবং প্রাচীন বিশ্বের জ্ঞানবিজ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।

এশিয়ার অন্যতম সমৃদ্ধ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা হয় ৪১৩ খ্রিস্টাব্দে। সেসময় এমন সুসজ্জিত ও পূর্ণাঙ্গ আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব ইতিহাস ঘেটে পাওয়া যায় না। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, সেসময় এই অঞ্চলে গুপ্তদের শাসনামল চলছিল। সেই অনুযায়ী, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সম্রাট কুমারগুপ্তকেই ধরে নেওয়া হয় যা পরবর্তীতে স্কন্ধগুপ্তের হাত ধরে আরও বিস্তৃত হয়। পরবর্তীতে পাল রাজাদের আমলে শিক্ষা-দীক্ষায় বেশ অগ্রগতি লাভ করে নালন্দা। ধর্মপালের সময়ে বিক্রমশীলা, সোমপুর ও ওদন্তপুরী প্রতিষ্ঠিত হলে তা নালন্দা মহাবিহারের জ্ঞানচর্চার গতিকে আরও ত্বরান্বিত করে৷ পাল রাজাদের আমলে বৌদ্ধ দর্শনের প্রভাবও বাড়তে থাকে।

নালন্দা ধ্বংসের আদ্যোপান্ত:

জ্ঞানবিজ্ঞানের পীঠস্থান নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় বহি:শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে একাধিকবার তবে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে ধ্বংসাত্মক আক্রমণ একবার-ই হয়েছে। ইতিহাসের পাতায় উল্লেখযোগ্য তিনটি আক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়। তথ্যানুযায়ী নালন্দা প্রথম আক্রান্ত হয় মিহিরকুলের নেতৃত্বে হুনদের দ্বারা, তারপর আক্রান্ত হয় বঙ্গাধীপতি শশাঙ্কের সেনাবাহিনী দ্বারা এবং পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় আফগান দস্যু বখতিয়ারের সেনাবাহিনী দ্বারা।

চলুন এবার ধারাবাহিক তথ্য বিশ্লেষণ করি। আমাদের মূল অভিপ্রায় থাকবে মোটামুটি প্রাইমারি সোর্স থেকেই সত্যানুসন্ধান করার।

১/ হুনদের দ্বারা আক্রান্ত: প্রথমবার নালন্দা আক্রান্ত হয় গুপ্ত সম্রাট স্কন্দগুপ্তের সময়ে। হুনরা মিহিরকুলের নেতৃত্বে ৪৫৫-৪৫৬ খ্রিষ্টাব্দে নালন্দা আক্রমণ করেছিলেন। সেই সময় শক, হুন, ইত্যাদি বহিরাগতরা প্রায়শই ভারত আক্রমণ করত। তবে স্কন্দগুপ্ত ও তার পরবর্তী রাজারা নালন্দাকে পুনরায় নির্মাণ করে আরও সমৃদ্ধ করেছিলেন। কারণ তিব্বতীয় চৈনিক পর্যটক হিউয়েন সাং (জুয়ানযাঙ্গ) সপ্তম শতকে যখন ভারত ভ্রমণে আসেন তখন নালন্দা হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষকে পরিপূর্ণ ছিলো।

২/ বঙ্গাধীপতি শশাঙ্ক দ্বারা আক্রান্ত: দ্বিতীয়বার নালন্দা আক্রান্ত হয় বঙ্গাধীপতি শশাঙ্কের সেনাবাহিনী দ্বারা৷ সম্ভবত বঙ্গরাজ শশাঙ্ক মগধ আক্রমণের সময় নালন্দা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে নালন্দা ধ্বংস হয় নি। তাছাড়া শশাঙ্কের উদ্দেশ্যও নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করা ছিলো না। যদি তা-ই হতো তবে বঙ্গের রাজধানী কর্ণসুবর্ণের নিকটে “রক্তমৃত্তিকা” মহাবিহারও ধ্বংস করে দিতেন। সপ্তম শতকেই ভারতে আসেন তিব্বতীয় চৈনিক পর্যটক হিউয়েন সাঙ (জুয়ানযাঙ্গ) এবং শীলভদ্রের অধীনে পড়াশোনাও করেন। তাঁর বর্ণনায় পাওয়া যায় সেসময় নালন্দার ১০০টি শ্রেণিকক্ষে প্রায় ২,০০০ শিক্ষকের অধীনে ২০,০০০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতো। হিউয়েন সাং ভারত থেকে ফেরার সময় শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ তে যান এবং এর পর উড়িষ্যা দিয়ে চীনে ফিরে যান। শশাঙ্ক যদি বৌদ্ধ বিদ্বেষী হতেন তবে হিউয়েন সাং কর্ণসুবর্ণে প্রবেশ করতে পারতেন না। উল্লেখ্য যে শশাঙ্ক যদি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসই করে দিতেন তবে হিউয়েন সাং ভারত থেকে ফেরার সময় ছয় শতাধিক ভারতীয় গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি নিয়ে যেতে পারতেন না। স্যামুয়েল বিল হিউয়েন সাঙের মূল রচনার ইংরেজি অনুবাদ করে “Si-Yu-Ki: Buddhist Records of the Western World” নামে প্রকাশ করেন। তাছাড়া বঙ্গাধীপতি শশাঙ্ক নালন্দা আক্রমণ করেছেন এমন কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না প্রাথমিক সোর্স থেকে।

৩/ আফগান দস্যু বখতিয়ারের সেনাবাহিনী দ্বারা আক্রান্ত: তৃতীয় আক্রমণ তথা ভয়ংকর ধ্বংসলীলা সংগঠিত হয়েছিল তুর্কী দস্যু বখতিয়ারের সেনাবাহিনী কর্তৃক। নালন্দা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়, প্রচুর পুস্তক ও ভিক্ষুদের আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। কিছু ভিক্ষু তিব্বত/নেপালে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করে। এই জন্যই বাংলার প্রাচীনতম পুস্তক চর্যাপদ বাংলা/বিহারে পাওয়া যায় না; চর্যাপদ উদ্ধার করা হয় নেপাল থেকে। তুর্কী দস্যু বখতিয়ারের সেনাবাহিনী যে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পুড়িয়েছিলো তার প্রমাণ মোটামুটি সকল প্রাথমিক সোর্স থেকেই পাওয়া যায়।

★ বখতিয়ার খিলজির সেনাবাহিনীর হাতেই যে নালন্দা মহাবিহার ধ্বংস হয়েছিলো তার প্রমাণ হিসেবে ফারসি ঐতিহাসিক মিনহাজ-ই-সিরাজ তাঁর তাবাকাত-ই-নাসিরি গ্রন্থেই নথিভুক্ত করেছিলেন। এই বইটি ত্রয়োদশ শতকে রচিত, পরবর্তীতে ১৮৭৩ সালে সেটা মেজর এইচ.জি. রাভেট্রি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। মিনহাজ লিখেছেন,

“মুহাম্মদ-ই-বখত-ইয়ার দুর্গটি দখল করে এবং ভীষণ লুট করে। সেখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দা ছিলো ব্রাহ্মণ এবং সকলের মাথা ছিলো মুণ্ডিত যাদের সবাইকেই হত্যা করতে৷ সেখানে বিশাল সংখ্যক পুস্তক ছিলো৷ যখন সবগুলো বই মুসলমানদের হাতে এলো এই বিষয়ক তথ্যের জন্য অনেক হিন্দুদের আনা হলো এবং সবাইকে হত্যা করা হলো। পরে, জানা গেলো এই দুর্গ এবং শহরটি ছিলো একটি কলেজ এবং হিন্দু ভাষায় এই কলেজকে বিহার বলা হতো৷ সেখানকার হাজার হাজার সন্ন্যাসীকে পুড়িয়ে মারা হলো এবং জীবতদের শিরোচ্ছেদ করা হলো। খিলজি তলোয়ারের মুখে বৌদ্ধদের উৎখাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলো৷ সেখানকার লাইব্রেরি মাসব্যাপী পুড়েছিলো এবং দগ্ধ পুস্তকের ধোঁয়ায় আশেপাশের পাহাড়গুলো অন্ধকার হয়ে গিয়েছিলো।”

★ দ্বিতীয় সোর্স হিসেবে রয়েছে সুব্রহ্মণ্য রচিত “নালন্দাদহন” নাটিকা। তিব্বতীয় বজ্রযানী বৌদ্ধদের শাস্ত্র “পিটক” এ এই নাটিকাটি সংকলিত আছে। বজ্রযানী সকল পিটক উরগ্যেন লিংপার হাত ধরেই পূর্ণতা পেয়েছিলো। উরগ্যেন লিংপা বহু হারিয়ে যাওয়া শাস্ত্রগ্রন্থের পান্ডুলিপি সংগ্রহ করে সংকলন করতেন, তিনি চতুর্দশ শতকের ব্যক্তি। তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে “নালন্দাদহন” নাটিকাটি অবশ্যই ত্রয়োদশ শতকের হবে যা প্রাথমিক সোর্স হিসেবে গ্রহণ করা যায়। নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে দেখা যায়, তুরষ্ক সেনাসমুদ্র নালন্দার রাজদ্বারে প্রবেশ করিল। তাহাদিগের যত অশ্বারোহী তরবারির অগ্রে ভিক্ষুদের কাটিতে ও পুড়াইতে লাগিল।

এক বরিষ্ঠ ভিক্ষু সেই ঘোর জঘন্য কার্য্যের বর্ণনা করিলেন : —

“তুরষ্কবর্গ বায়ুবেগে আসিল এবং তদীয় শত্রু চূর্ণ করিতে লাগিল। সহস্র সহস্র ভিক্ষুকে কাটিয়া তাহারা যেন হত্যাযজ্ঞব্রত ধারণ করিয়াছে।”

সেনাপতি পুস্তকালয় দহনে উদ্যত দেখিয়া পুস্তকালয়ের অধ্যক্ষা ভিক্ষুণী ভাগেশ্বরী তাঁর কাছে প্রার্থনা করিলেন : —

“হে মহামতি মহাসেনাপতি! পুড়াইও না! শত সহস্র বিদ্বানের সাধনধনসঞ্চিত এই জ্ঞানভাণ্ডার পুড়াইও না। আমরা স্বল্পায়ু মানুষ, সাধন‌ও স্বল্প; তথাপি কোটি কোটি জ্ঞাননিমগ্ন বিদ্বানের জ্ঞান দ্বারা বর্ধিত এই ভাণ্ডার অখিলহিতকারী। তোমাদিগের দেশের পণ্ডিতরাও এইসকল খণ্ডন করিতে পারেন। এ যে শাস্ত্রের অকৃত্রিম ভাণ্ডার!”

(নাটিকার অনুবাদক: Koyel Writes)

★ তৃতীয় সোর্স হিসেবে আচার্য ধর্মস্বামীর বায়োগ্রাফি ব্যবহার করা যায়। উনার বায়োগ্রাফী “Upasaka Chos-dar” এর মূল তিব্বতীয় পাণ্ডুলিপি ইংরেজি অনুবাদ করেন Dr. George Roerich যেটা ১৯৫৯ সালে জয়সাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট, পাটনা থেকে প্রকাশিত হয়। ধর্মস্বামী ১২৩৩/১২৩৪ সালে ভারতে আসেন এবং ওদন্তপুরীতে গিয়ে দেখেন সেটা একজন তুর্কী (এক আফগান সম্প্রদায়) সেনা কমান্ডারের বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তুর্কী সেনারা বিক্রমশীলা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। তুর্কীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত নালন্দার ৮০টি ছোট বিহার বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় রাজা বুদ্ধসেনার অর্থায়নে মাত্র দুটো বিহারের কার্যক্রম চলমান ছিলো। এগুলো পরিচালনা করতেন ৯০ বছর বয়স্ক সন্ন্যাসী রাহুল শ্রীভদ্র, আচার্য ধর্মস্বামী উনারই শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। আচার্য ধর্মস্বামী চাগ লোতস্বা নামেও পরিচিত ছিলেন।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে বখতিয়ার খিলজির সেনাবাহিনী দ্বারাই নালন্দার বড় বড় বিহারগুলো ধ্বংস হয় এবং খিলজি মারা যাওয়ার পরও তুর্কী সেনাবাহিনী নালন্দার সম্পূর্ণ এলাকা দখল করে রেখেছিলো। অনেকে বলার চেষ্টা করে তুর্কী আক্রমণের পরও নালন্দা টিকে ছিলো। আচার্য ধর্মস্বামী ১২৩৩/১২৩৪ সালে যখন নলন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমণে আসেন তিনি দেখেন যে ৯০ বছর বয়স্ক রাহুল শ্রীভদ্র মাত্র ৭০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শ্রেণিকক্ষ পরিচালনা করছেন। তার উপস্থিতিতেই তুর্কী সৈন্যদের দ্বারা নালন্দা আবার আক্রান্ত হয় এবং সকল শিক্ষার্থী পলায়ন করে।

মন্তব্য: এই ছিলো মোটামুটি নালন্দা ও তার পার্শ্ববর্তী বিহারগুলোর ধ্বংসের প্রাথমিক ইতিহাস যেখানে ঘুরেফিরে বখতিয়ার ও তার সেনাবাহিনী এবং তার উত্তরসূরীদের জড়িত থাকার ইতিহাস স্পষ্ট। অনেকে বলে নালন্দা মহাবিহার কেবল বৌদ্ধ স্থাপনা, হিন্দুদের কোন অধিকার নেই। অথচ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় হিন্দু রাজা কুমারগুপ্তের সময় এবং নালন্দা চুড়ান্ত উৎকর্ষতা লাভ করে স্কন্দগুপ্তের হাত ধরে। পরবর্তীতে অষ্টম শতকে পাল রাজা ধর্মপাল আরও কিছু বিহার স্থাপন করে নালন্দাকে আরও বিস্তৃত করার চেষ্টা করেছেন। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা নালন্দায় রাখা হিন্দু দেববিগ্রহগুলোরও অনাদর করতেন না। নালন্দার প্রত্নতাত্ত্বিক খননে গণেশ, চামুণ্ডা, উমা-মহেশ্বর, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, বুদ্ধ ও সূর্য বিগ্রহ পাওয়া যায়। কলমে: অনিক কুমার সাহা

Daily World News

এনআইডি কার্ড জালিয়াতি করে ও বোনের জেএসসি সনদপত্র ব্যবহার করে খুর্শিদা আক্তারের ডিপ্লোমা নার্সিং ডিগ্রী

আসন্ন যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে ৩৪ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী লড়বেন

//দৈনিক বিশ্ব নিউজ ডেস্ক //

যুক্তরাজ্যে জাতীয় নির্বাচনে এবার বিভিন্ন দলের মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অনেকেই। সব মিলিয়ে অন্তত ৩৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে থেকে লেবার পার্টি থেকে আছেন ৮ জন এবং কনজারভেটিভ থেকে ২ জন।

লেবার পার্টি থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আটজন ব্রিটিশ নাগরিক হলেন রুশনারা আলী, রুপা হক, টিউলিপ সিদ্দিক, আফসানা বেগম, রুমী চৌধুরী উইথহাম, রুফিয়া আশরাফ, নুরুল হক আলী, নাজমুল হোসাইন। তাদের মধ্যে রুশনারা আলী, রুপা হক, টিউলিপ সিদ্দিক এবং আফসানা বেগম এপি হিসাবে দায়িত্বরত আছেন।

ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির মনোনয়নে নির্বাচনি লড়াইয়ে আছেন লন্ডনের দক্ষিণে টটেনহাম আসনে আতিক রহমান এবং ইলফোর্ড সাউথ আসনে সৈয়দ সাইদুজ্জামান। ওয়ার্কার্স পার্টি অব ব্রিটেন থেকে ছয়জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক মনোনয়ন পেয়েছেন।

ইলফোর্ড সাউথে গোলাম টিপু, বেডফোর্ডে প্রিন্স সাদিক চৌধুরী, হেকনি সাউথে মোহাম্মদ সাহেদ হোসাইন, আলট্রিচহাম অ্যান্ড সেল ওয়েস্টে ফয়সাল কবির, ম্যানচেস্টার রসলমোতে মোহাম্মদ বিলাল এবং স্টার্টফোর্ড অ্যান্ড বো আসনে হালিমা খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইলফোর্ড সাউথ আসনে রিফর্ম পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রাজ ফরহাদ।

লিবারেল ডেমোক্র্যাটসের মনোনয়নে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রাবিনা খান। স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি থেকে নাজ আনিস মিয়া ডুনফারমলাইন অ্যান্ড ডলার আসনে লড়ছেন। গ্রিন পার্টির মনোনয়নে ইলফোর্ড সাউথে সাইদ সিদ্দিকী, ওল্ডহাম ওয়েস্ট অ্যান্ড রয়টনে সাইদ শামসুজ্জামান শামস এবং লেস্টার সাউথ আসনে শারমিন রাহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সোশ্যালিস্ট পার্টির হয়ে ফোকস্টোন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মমতাজ খানম। এছাড়াও নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ১১ ব্রিটিশ নাগরিক। হলবর্ন অ্যান্ড প্যানক্রাসে লড়ছেন ওয়েইছ ইসলাম। বেথনালগ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি গ্রিনে আজমাল মাশরুর, সুমন আহমেদ ও সাম উদ্দিন। পপলার অ্যান্ড লাইম হাউসে এহতেশামুল হক। স্টার্টফোর্ড অ্যান্ড বোতে ওমর ফারুক ও নিজাম আলী। ইলফোর্ড সাউথে নূরজাহান বেগম।

নিউক্যাসল সেন্ট্রাল অ্যান্ড ওয়েস্টে হাবিব রহমান। বেক্সিল অ্যান্ড ব্যাটেলে আবুল কালাম আজাদ। ওল্ডহাম ওয়েস্ট, চেটারটন অ্যান্ড রয়স্টোনে রাজা মিয়া। যুক্তরাজ্যের আসন্ন নির্বাচনে ছোট-বড় প্রায় ৯৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি বিতর্ক এর পর বাইডেন শিবিরে হতাশা, ট্রাম্প শিবির হাস্যোজ্জল

//দৈনিক বিশ্ব আন্তর্জাতিক ডেস্ক//

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিলেন জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিতর্কে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁরা পরস্পরকে আক্রমণ করেন। আক্রমণ ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে যায়।

তবে বিতর্কে বাইডেন ভালো করতে পারেননি। এ নিয়ে তাঁর নিজ দল ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে হতাশা দেখা গেছে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাইডেনের বিতর্ক শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে বিপদঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে।

অবশ্য বাইডেন মনে করেন, তিনি ভালোই করেছেন। একই সঙ্গে বলেন, একজন মিথ্যাবাদীর সঙ্গে বিতর্ক করা কঠিন।

অন্যদিকে বিতর্ক শেষ হওয়ার আগেই ট্রাম্পের প্রচারশিবির তাঁর জয় দাবি করে। মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান দলের নেতা স্টিভ স্কালিস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ট্রাম্প বিতর্কে জয়ী হয়েছেন। বাইডেন আরেক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার উপযুক্ত নন। ট্রাম্পই আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের একমাত্র পছন্দের প্রার্থী।

ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টারা বিতর্কের সময় তাঁর (ট্রাম্প) নৈপুণ্য উদ্‌যাপন করেছেন। বাইডেনকে নিয়ে আসা প্রতিক্রিয়া তাঁরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। ডেমোক্র্যাটদের দিক থেকে আসা ব্যাপক উদ্বেগের দিকটি তাঁদের নজরে এসেছে।

ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, ট্রাম্পকে শক্তভাবে মোকাবিলা করতে পারেননি বাইডেন। এই সুযোগে ট্রাম্প অনর্গল মিথ্যা বলে গেছেন।

বাইডেন প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস নিজেও স্বীকার করেছেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী (বাইডেন) ধীরগতিতে শুরু করেছিলেন। তবে পরে দৃঢ়ভাবে বিতর্ক শেষ করতে পেরেছেন। ভোটারদের বাইডেনের কৃতিত্বের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, বিতর্কের দিকে নয়।

আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেন লড়বেন ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে। আর রিপাবলিকান পার্টির হয়ে লড়বেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল ৭টায়) সিএনএনের আটলান্টা স্টুডিওতে বিতর্কে অংশ নেন বাইডেন ও ট্রাম্প। চার বছর পর তাঁরা প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নেন। বিতর্ক মঞ্চে উঠলে প্রথা অনুসারে করমর্দন করেননি তাঁরা। প্রায় দেড় ঘণ্টার বিতর্কে ট্রাম্প ৪০ মিনিট ১২ সেকেন্ডের মতো কথা বলেন। অপর দিকে বাইডেন কথা বলেন ৩৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ড।

বাইডেন-ট্রাম্পের বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, গণতন্ত্র, অভিবাসন, সীমান্ত সংকট, গর্ভপাত, সামাজিক নিরাপত্তা, মূল্যস্ফীতি, কর, কর্মসংস্থান, জাতীয় ঋণ, স্বাস্থ্যসেবা, জলবায়ু, গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বিষয় উঠে আসে। বিভিন্ন বিষয়ে বলতে গিয়ে তাঁরা পরস্পরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন।

অর্থনীতি

মার্কিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দুজন দুজনকে দোষারোপ করেন। বাইডেন দাবি করেন, তিনি ট্রাম্পের রেখে যাওয়া নাজুক অর্থনীতি পেয়েছেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের দাবি, বাইডেন উত্তরাধিকার সূত্রে একটি ভালো অর্থনীতি পেয়েছেন।

সীমান্ত সংকট

বাইডেনের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত সংকটে কেন ভোটাররা তাঁর ওপর আস্থা রাখবেন। জবাবে বাইডেন বলেন, মার্কিন কংগ্রেসে একটি দ্বিদলীয় সীমান্ত বিল পাস করার জন্য তাঁর প্রশাসন অনেক চেষ্টা করেছে। অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্পের আমলের নানা পদক্ষেপের সমালোচনা করেন বাইডেন। তিনি বলেন, তখন এমন একটি পরিস্থিতি দেখা যায়, যেখানে অভিবাসনপ্রত্যাশী মায়েদের কাছ থেকে তাঁদের শিশুদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। শিশুদের আলাদা করছিলেন। শিশুদের খাঁচায় রাখছিলেন। পরিবারগুলোর পৃথককরণ নিশ্চিত করেছিলেন। এটা সঠিক উপায় নয়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সহিংস অপরাধের জন্য বাইডেনের অভিবাসননীতিকে দায়ী করেন ট্রাম্প।

ক্যাপিটল হিলে হামলা

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলার জন্য ট্রাম্পকে দায়ী করেন বাইডেন। তিনি বলেন, ক্যাপিটল হিলে যেতে লোকজনকে উৎসাহিত করেছিলেন ট্রাম্প। তিনি বসে বসে সেদিনের ঘটনা দেখেছেন। ট্রাম্প বলেন, সেদিন তাঁর কার্যত কিছুই করার ছিল না।

গাজা যুদ্ধ

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধের অবসান ঘটাতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন করবেন কি না, এই প্রশ্নে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি ট্রাম্প। বাইডেনকে প্রশ্ন করা হয়, এই যুদ্ধ শেষ করতে তিনি কী করবেন। উত্তরে বাইডেন বলেন, হামাসই এই যুদ্ধের শেষ চায় না। বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি তাঁর জোরালো সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

ইউক্রেন যুদ্ধ

বিতর্কে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ উঠে আসে। বাইডেন বলেন, তিনি মনে করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একজন যুদ্ধাপরাধী। তিনি পুরোনো সোভিয়েত সাম্রাজ্য আবার প্রতিষ্ঠা করতে চান। ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থের চেয়ে বেশি অস্ত্র দেওয়ার কথা জোরালোভাবে বলেন বাইডেন। ট্রাম্প বলেন, তিনি নির্বাচনে জিতলে ইউক্রেনে যুদ্ধ থামাবেন। ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের শর্ত নিয়ে ট্রাম্পকে প্রথমে একবার প্রশ্ন করেন সঞ্চালক। প্রথমবার ট্রাম্প উত্তর এড়িয়ে যান। এরপর দ্বিতীয়বার ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, পুতিনের শর্তগুলো তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য কি না? জবাবে ট্রাম্প বলেন, গ্রহণযোগ্য নয়।

মামলা

ট্রাম্পের ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া নিয়ে তাঁকে তীব্র আক্রমণ করেন বাইডেন। তিনি ট্রাম্পের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ নিয়ে তিনি ট্রাম্পকে ‘কটূক্তি’ করেন। ট্রাম্পকে একজন দোষী সাব্যস্ত অপরাধী হিসেবে উল্লেখ করেন বাইডেন। বিতর্কের একপর্যায়ে বাইডেন বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে একাধিক মামলা রয়েছে, সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। প্রকাশ্যে এক নারীকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ট্রাম্পকে যে আদালত জরিমানা করেছেন, সে কথা তোলেন বাইডেন। ট্রাম্প বিস্তর অপরাধ করেছেন বলে বাইডেন অভিযোগ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ট্রাম্প রাতে এক পর্ন তারকার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেন, অথচ তখন ঘরে তাঁর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

বয়স

বয়স নিয়ে বাইডেন বলেন, ট্রাম্প তাঁর চেয়ে মাত্র কয়েক বছরের ছোট। তবে তিনি (ট্রাম্প) অনেক কম দক্ষ। বাইডেন ভোটারদের ট্রাম্পের রেকর্ড দেখার জন্য আহ্বান জানান। প্রতিক্রিয়ায় বাইডেনের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ট্রাম্প দুজনের জ্ঞানীয় ক্ষমতার পরীক্ষার কথা বলেন।

 

টানা তৃতীয়বার নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন কিন্তু বিভাবে এবং কত আসন পেলেন

//দৈনিক বিশ্ব আন্তর্জাতিক ডেস্ক//

  • ২০১৪ সালে ২৮২ আসন পেয়ে সরকার গড়েছিলেন মোদি। পাঁচ বছর পর পেয়েছিলেন ৩০৩ আসন।
  • জোট সরকার চালানোর কোনো অভিজ্ঞতা মোদির নেই। এবারই প্রথম তাঁকে জোট সরকার গঠন করতে হচ্ছে।

আরও একবার প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি। এই নিয়ে টানা তৃতীয়বার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পাশে নিজের নামটিও তিনি খোদাই করতে চলেছেন। যদিও নেহরুর মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে তিনি ব্যর্থ হলেন। পারলেন না ‘চার শ পার’ স্লোগান সার্থক করে রাজীব গান্ধীর রেকর্ড টপকে যেতে।

গতকাল মঙ্গলবার লোকসভা নির্বাচনের ফল মোদির দল বিজেপি এককভাবে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন পেলেও তাদের এনডিএ তিন শ আসনও ছুঁতে পারল না। প্রবলভাবে উঠে এল কংগ্রেসের উদ্যোগে গড়া ‘ইন্ডিয়া’ জোট। টানা এক দশক পর তারা মোদির বিজেপির একদলীয় শাসনের অবসান ঘটাল। সরকার গড়লেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদিকে এখন থেকে হতে হবে পরমুখাপেক্ষী। তাঁর ঘাড়ে প্রতিনিয়ত শ্বাস ফেলবে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া।

ভারতের নির্বাচন কমিশন ও গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ২৮৬ আসন পেয়েছে। ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ২০২টি আসন। বিজেপি একা সরকার গঠনের জন্য ২৭২ ম্যাজিক ফিগারের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ। দলটি পেয়েছে ২৪০ আসন। কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯টি। এর অর্থ, বিজেপিকে সরকার গড়তে হলে নির্ভর করতে হবে প্রধানত দুই শরিক নীতীশ কুমারের জেডি–ইউ ও অন্ধ্র প্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডুর দল তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) ওপর। এই দুই দলের সম্মিলিত আসন ২৮টি।

কংগ্রেস স্বভাবতই এই ফলে উৎফুল্ল। গতকাল বিকেলে দলীয় দপ্তরে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল ও প্রিয়াঙ্কাকে পাশে নিয়ে সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই ফল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক ও নৈতিক পরাজয়। গোটা নির্বাচনটাই বিজেপি লড়েছিল মোদির নামে। যাবতীয় গ্যারান্টিও দিয়েছিলেন মোদি। এটা ছিল তাঁর পক্ষে অথবা বিপক্ষের গণভোট। জনতা তাঁর বিরুদ্ধেই মত দিয়েছে।

খাড়গে ও রাহুল দুজনেই জানিয়েছেন, ইন্ডিয়া জোটের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে বুধবার (আজ)। সবার সঙ্গে আলোচনা করে সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। ওয়েনাড ও রায়বেরিলি, দুই জেতা আসনের কোনটি রাখবেন কোনটি ছাড়বেন—সেই সিদ্ধান্তও সবার সঙ্গে আলোচনার পর নেবেন বলে রাহুল জানান। দুই নেতাই বলেন, এই জয় জনতার জয়।

এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, আগামী দিনগুলোয় প্রশাসক নরেন্দ্র মোদিকে নতুনভাবে আবির্ভূত হতে হবে। সেই ভূমিকা কোনো দিন তিনি পালন করেননি। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর সরকার ছিল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ। কারও ওপর নির্ভর করতে হয়নি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও তাঁর নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে কখনো অন্য কারও মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়নি। ২০১৪ সালে সরকার গড়েছিলেন ২৮২ আসন পেয়ে। পাঁচ বছর পর পান ৩০৩ আসন। এবার এক ঝটকায় তা ২৪০– এ নেমেছে। সরকার গড়ার এই যে ৩২টি আসন ঘাটতি, তা মেটাতে হবে জেডি–ইউ, টিডিপি, শিবসেনার শিন্ডে গোষ্ঠী, চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি ও উত্তর প্রদেশের জয়ন্ত চৌধুরীর আরএলডির মতো দলগুলোর সমর্থন নিয়ে। এদের কাউকেই উপেক্ষা বা অবজ্ঞা করার মতো অবস্থায় মোদির বিজেপি থাকবে না; বরং সারাক্ষণ তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। দাবি মানতে হবে। পছন্দের মন্ত্রিত্বও দিতে হবে। না হলে জোট ছাড়ার প্রচ্ছন্ন শঙ্কার মধ্যে থাকতে হবে। নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবুর অতীত মোদির জানা। বারবার তাঁরা জোটে এসেছেন, বেরিয়েও গেছেন। নাইডু এবার আরও শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান। অন্ধ্র প্রদেশে একার ক্ষমতাতেই সরকার গড়ার মতো অবস্থায় তিনি। মোদি তাঁকে এতটাই গুরুত্ব দিচ্ছেন যে গণনা চলাকালীনই তাঁকে ফোন করে জানিয়ে দেন, তাঁর শপথে নিজে উপস্থিত থাকবেন। চন্দ্রবাবু শপথ নেবেন ৯ জুন, ওই দিনটিই মোদি বেছে রেখেছিলেন তৃতীয়বার শপথ নেওয়ার জন্য।

জোট সরকার চালানোর কোনো অভিজ্ঞতাই মোদির নেই। জোটের ধর্ম কেমন, তা–ও তাঁর অজানা। টানা ১০ বছর দাপিয়ে তিনি শাসন করেছেন। কারও তোয়াক্কা না করে সরকার চালিয়েছেন। পুরোপুরি নিজের ইচ্ছেমতো। সেই উঁচু মাথা হেঁট করে অনমনীয় চরিত্র নমনীয় করে শরিকদের যাবতীয় আবদার মেনে শাসন করার কায়দা তাঁকে শিখতে হবে। আত্মমগ্ন ও কর্তৃত্ববাদী কোনো শাসকের পক্ষে রাতারাতি এই রূপান্তর কঠিন। সেই কঠিন কাজই মোদিকে রপ্ত করতে হবে। এমন মোদিকে কেউ কখনো দেখেনি। সে দিক দিয়ে তিনি নিজেই চমকপ্রদ দ্রষ্টব্য হয়ে উঠবেন।

এই ভোট ও তার ফল নরেন্দ্র মোদির কয়েকটি স্বপ্নও খানখান করে দেবে। যেমন তাঁর সাধের ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি। তিনি ভেবেছিলেন, প্রথম দুবারের মতো একক ক্ষমতায় তৃতীয়বার সরকারে এলে এই নীতি চালু করে দেবেন। ইন্ডিয়া জোট শুরু থেকেই ওই নীতির বিরোধী। এনডিএর শরিকদেরও তাতে মত থাকবে কি না, সন্দেহ। একইভাবে বানচাল হয়ে যাবে বহু প্রচারিত অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার বিষয়টিও। দুটি সিদ্ধান্ত বলবৎ করতে গেলে সংবিধান সংশোধন জরুরি। সে জন্য প্রয়োজন সংসদের দুই–তৃতীয়াংশ সমর্থন; এই ফলের পর যা আশা করা বৃথা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাতিল হওয়া ‘ইলেকটোরাল বন্ড’ কিছুটা পাল্টে নতুন করে আনার পরিকল্পনা মোদির ছিল। সেই আশাও জলাঞ্জলি দিতে হবে। ‘পিএম কেয়ার্স’ তহবিলও এরপর সরকারি অডিটের আওতার বাইরে রাখা মোদির পক্ষে সম্ভবপর হবে কি না, বলা কঠিন। বিরোধীদের উপস্থিতি সোয়া দুই শর বেশি হওয়ায় অর্ধেক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানের পদ তাদের দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, গত পাঁচ বছর হীনবল বিরোধীদের যে দাবি মোদি কর্ণপাত করেননি, তা এবার মেনে নিয়ে লোকসভার ডেপুটি স্পিকারের পদটি দিতে হবে বিরোধীদের। ৯৯ আসন পাওয়া কংগ্রেসকে দিতে হবে বিরোধী নেতার পদ, যা পেতে গেলে ৫৫ আসন জিততে হয়। গতবার যা ছিল মোদির দাক্ষিণ্য।

দেখার বিষয় আরও আছে। পাঁচ বছর ধরে মোদি সরকার ইডি, সিবিআই, আয়কর বিভাগ, এনআইএর যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে। তাদের দল ভাঙানো ও দল গঠনের মতো কাজে লাগিয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। রাহুল নিজেই গতকাল বলেছেন, কংগ্রেসকে বিপদে ফেলতে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছিল। তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর শক্তিশালী বিরোধীদের চাপে এই প্রবণতা কতটা বজায় থাকে, সেটাও দেখার। স্পষ্টতই এত দিন মোদির সরকার এদের যেভাবে ব্যবহার করে এসেছে, তাতে তাদের রাশ টানতেই হবে। এত দিন ধরে যে বিশেষণে মোদি ভূষিত হয়েছেন, সেই ‘স্বৈরতন্ত্রী’ তকমা বজায় রাখতে তিনি পারবেন কি?

এই ফল জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের প্রাসঙ্গিকতা নতুন করে ফিরিয়ে আনল। হিন্দি বলয়ে যে দল প্রায় মুছে গিয়েছিল, কিছুটা হারানো জায়গা তারা ফিরিয়ে আনল। বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান ও বিহারে। পাঞ্জাবের প্রতিষ্ঠিত সব কংগ্রেস নেতা বিজেপিতে চলে গেলেও একার ক্ষমতায় তারা অধিকাংশ আসন জিতেছে। মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা ও কর্ণাটকে জমি খুঁজে নিয়েছে। ব্যর্থতা তাদের অবশ্যই আছে। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ওডিশা, অন্ধ্র প্রদেশে কিছুই প্রায় করতে পারেনি। কিন্তু আসনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করে ১০০ ছুঁই ছুঁই অবস্থায় পৌঁছে যাওয়া দলটাকে চনমনে করে তুলবে। বিশেষ করে উত্তর প্রদেশে পায়ের তলার জমি আরও শক্ত করতে প্রিয়াঙ্কাকে রায়বেরিলি থেকে জিতিয়ে আনার পরিকল্পনা যখন রয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যায় মহা ধুমধামের সঙ্গে বিজেপি তাদের দলীয় দপ্তরে বিজয় দিবস উদ্‌যাপন করল। দৃশ্যত উৎফুল্ল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সহাস্য মুখে অভিবাদন গ্রহণ করলেন। যদিও মনে খচখচানি তাঁর থাকারই কথা। দলের ৩৭০ পাওয়া তো দূরের কথা, জোটকে ৩০০ পাইয়ে দিতেও তিনি ব্যর্থ। শুধু কি তাই? যে বারানসি থেকে গতবার তিনি সাড়ে ৪ লাখের বেশি ব্যবধানে জিতেছিলেন, সেখানে পিছিয়ে পড়েও জয় পেয়েছেন মাত্র দেড় লাখ ভোটে। নরেন্দ্র মোদির কাছে দুটোর কোনোটাই সম্মানের নয়।

১২ কোটি বছর আগের ডাইনোসরের ৪০০ পায়ের ছাপ চীনে

//দৈনিক বিশ্ব আন্তর্জাতিক ডেস্ক//

চীনে চার শতাধিক ডাইনোসরের পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। ইউননান প্রদেশের চুসিয়ং ই স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারে পাওয়া ছাপগুলো প্রায় ১২ কোটি বছর আগের ক্রিটেসিয়াস যুগের বলে জানিয়েছেন চীনা প্রত্নতাত্ত্বিকরা। চীনের সংবাদমাধ্যম সিসিটিভি এ খবর জানিয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, ছাপগুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে যে ক্রিটেসিয়াস যুগে লুফেং এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির ডাইনোসরের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল।

মে মাসের শুরুর দিকে দুই স্থানীয় গ্রামবাসী ছাপগুলো আবিষ্কার করে প্রশাসনকে জানান। লুফেং শহরের কংলংশান টাউনের পাহাড়ে পাওয়া গেছে পায়ের ছাপগুলো। জায়গাটির শিলাস্তর পরীক্ষায় দেখা গেছে ছাপগুলো প্রায় ১২ কোটি বছরের পুরোনো। কংলংশান টাউনের বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘ডাইনোসর পর্বত’।

ডাইনোসর ফসিল প্রটেকশন ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ওয়াং তাও জানান, ছাপগুলোকে তারা তিন শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। এগুলোর কিছু টি-রেক্সের, আবার কোনোটি স্টেগোসর প্রজাতির।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রইসি সহ বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের থাকা সব কর্মকর্তারা মারা গেছেন

//দৈনিক বিশ্ব আন্তর্জাতিক ডেস্ক//

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানসহ বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের থাকা সব কর্মকর্তারা মারা গেছেন। দেশটির আধা সরকারি নিউজ এজেন্সি মেহের নিউজ এ খবর দিয়েছে।

ইরানি সংবাদমাধ্যমটির বরাত আল জাজিরা জানিয়েছে, বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারে ছিলেন পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমাতিও। যদিও প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর বিষয়টি এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত করেননি দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইরানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা রয়টার্সকে প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ হেলিকপ্টারে থাকা কর্মকর্তাদের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে চিকিৎসকরাও দুর্ঘটনাস্থলে প্রাণের কোনো অস্তিত্ব পাননি বলে জানিয়েছেন।

এর আগে রোববার আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে যান ইব্রাহিম রাইসি। সেখানে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও ছিলেন। সেখান থেকে তিনটি হেলিকপ্টারের বহর নিয়ে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফিরছিলেন ইব্রাহিম রাইসি ও তার সঙ্গে থাকা অন্য কর্মকর্তারা।

সোমবার আল জাজিরার খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার মুখে পড়ার পর সেখানে কারও জীবিত থাকার ‘কোনো চিহ্ন’ নেই বলে ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি বলছে।

অন্যদিকে ইরানের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স আরও জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় হেলিকপ্টারটি ‘সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে’।

পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে দুর্গম পাহাড়ে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। তবে অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছায়।

ভিএফএসে ভিসা ফাইলঃ ভুক্তভোগীরা জিম্মি, অভিযোগ ও হতাশা

//দৈনিক বিশ্ব নিউজ ডেস্ক //

সংযুক্ত আরব আমিরাতে গাড়ি চালিয়ে বেশ ভালোই কাটছিল নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বাসিন্দা জাকির হোসেনের দিনকাল। আরো নির্ভার, স্বচ্ছন্দ জীবনের আশায় স্বপ্ন বোনেন ইতালি যাওয়ার। এক বন্ধুর মাধ্যমে ইতালির ভিসা প্রক্রিয়া শুরু করেন। গ্রামের বাড়িতে জমি বিক্রি করে ১৩ লাখ টাকায় নুলস্তা (ওয়ার্ক পারমিট) হাতে পান।

ভিসা আবেদন করতে ফিরে আসেন দেশে। এ পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। বিপত্তির শুরু ভিসার দীর্ঘসূত্রতায়। নিয়ম অনুযায়ী, তিন মাসের মধ্যে ইতালির ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি করতে হয়।

কিন্তু জাকিরের অপেক্ষা ফুরায় না ৯ মাসেও। এর মধ্যে ইউএইর ভিসার মেয়াদও শেষ। ইতালির ভিসাও যদি না পান, তাহলে পরিবার নিয়ে পথে নামতে হবে তাঁকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে জাকির বলেন, ‘আমার জমিজমা বিক্রি করে দিয়েছি।

দুবাইয়ের ভিসাও শেষ। এখন আমার সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। আমার সবই শেষ।’

শুধু জাকির হোসেন নন, এমন লাখো ইতালি গমনেচ্ছু মানুষের ঘরে ঘরে এখন শুধুই কান্না, হতাশা আর হাহাকার। গত ২৭ মার্চ ঢাকাস্থ ইতালিয়ান রাষ্ট্রদূতের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে এক লাখ ১১ হাজার বাংলাদেশি ভিসাপ্রার্থীর পাসপোর্ট।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ভিসা প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ভিএফএস গ্লোবালের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এই দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে ভিএফএসের কাছে জিম্মি হয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে এক লাখের বেশি ভিসাপ্রত্যাশী ও তাঁদের পরিবার।

এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক ভিসাপ্রত্যাশী এরই মধ্যে বিপুল অর্থ ইতালিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এক হিসাবে জানা গেছে, শুধু নুলস্তা পেতেই এক লাখ ১১ হাজার ভিসাপ্রার্থীর কাছ থেকে ইতালিতে চলে গেছে প্রায় ৮০ কোটি ডলার। এমনকি দীর্ঘ ১৬ মাস ধরে ইতালির ভিসার প্রত্যাশায় ঘুরে ঘুরে দিন কাটছে তাঁদের। ফলে তাঁদের উপার্জনও থমকে গেছে। সাধারণত ইতালি গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের মধ্যে ৬০ শতাংশ কৃষি ভিসার আবেদন করে থাকেন। বাকি ৪০ শতাংশ স্পন্সর ভিসার। কৃষি খাতে ভিসার জন্য ১৪ লাখ টাকা এবং স্পন্সর ভিসার জন্য ১৯ লাখ টাকা লাগে। তবে নুলস্তা পেতে সংশ্লিষ্ট কম্পানিতে ৫০ শতাংশ টাকা জমা দিতে হয়। সে হিসাবে এরই মধ্যে নুলস্তা পেতে ইতালিতে চলে গেছে প্রায় ৮০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় আট হাজার ৮৮০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে)। এ ছাড়া ভিএফএসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাবদ এসব কর্মীর খরচ হয়েছে অন্তত ২২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে আরো কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা দালালদের পকেটে ঢুকেছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। এভাবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ইতালিতে চলে গেলেও দেশে পড়ে আছেন হতভাগ্য ভিসাপ্রার্থীরা।

জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা পড়েছে আরো ৯ হাজার ৬০০টি। ফলে ইতালিতে কর্মী পাঠানো ছাড়াই নুলস্তা বাবদ আরো বিপুল অর্থ চলে গেছে। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপেও জানা গেছে, কেউ কেউ অর্ধেকের বেশি টাকা এরই মধ্যে ইতালিতে সংশ্লিষ্ট কম্পানি এবং আইনি পরামর্শ প্রতিষ্ঠানে পরিশোধ করে রেখেছেন।

ঢাকাস্থ ইতালিয়ান দূতাবাসের সূত্র মতে, ২০২২ সালের ৩৫ হাজার ও ২০২৩ সালের ৭৬ হাজার নিয়ে মোট এক লাখ ১১ হাজার পাসপোর্ট জমা নেয় ভিএফএস গ্লোবাল। গত ২৭ মার্চ ভিসাপ্রার্থীদের মানববন্ধনের পর ইতালিয়ান রাষ্ট্রদূত অ্যান্তোনিও আলেসান্দ্রোর দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে আটকে থাকা পাসপোর্ট বিতরণের আশ্বাস দেন। এর পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। উল্টো দিন দিন বড় হচ্ছে আটকে থাকা পাসপোর্টের সংখ্যা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মাসের শুরু থেকে প্রতিদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে ভিএফএসের মাধ্যমে সব মিলে ২৫০ থেকে ৩০০টি ভিসা আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে। বিপরীতে ভিসা নিষ্পত্তির পর পাসপোর্ট বিতরণ করা হচ্ছে মাত্র ৫০ থেকে ১৫০টি।

অভিবাসন খাতের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নুলস্তার সত্যতা যাচাইয়ের কারণে দীর্ঘসূত্রতার দোহাই দেওয়া হলেও মূলত কাজটি খুবই সহজ। এটি যাচাই করা মাত্র ৩০ সেকেন্ডের ব্যাপার। এর জন্য সাত থেকে আট মাস বা এক বছর সময় লাগাটা অযৌক্তিক। এর ফলে বৈধ পথ ছেড়ে অবৈধ পথেই পা বাড়াচ্ছেন ইতালি গমনেচ্ছু কর্মীরা। এর দায় ভিএফএস গ্লোবাল এড়াতে পারে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘ভিএফএস গ্লোবালের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় আমাদের নজরে এসেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। খুব দ্রুত এগুলোর সমাধান হবে।’ বিদেশগামী কর্মীদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় জোরালোভাবে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

ইউরোপের শ্রমবাজারে ভিসা প্রক্রিয়ার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ভিএফএস গ্লোবাল। বাংলাদেশসহ ১৪৭টি দেশে তারা ভিসা প্রক্রিয়ার কাজ করে থাকে। বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে তারা তাদের সার্ভিস দিয়ে থাকে। তবে ঢাকা বাদে বাকি দুই জেলায় শুধু প্রিমিয়াম সার্ভিস দেয় ভিএফএস গ্লোবাল। ঢাকায় প্রিমিয়াম সার্ভিসের পাশাপাশি সাধারণ সার্ভিসও চালু রয়েছে। তবে প্রিমিয়াম সার্ভিসের নামে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে সংস্থাটি। প্রতিবেশী দেশ ভারত প্রিমিয়াম সার্ভিসে যে সেবা দিচ্ছে, তার থেকে অনেক অনুন্নত সেবা দিয়েই কর্মীপ্রতি তিন হাজার ৮৯৯ টাকা বেশি নিচ্ছে ভিএফএস, যা বছরে গিয়ে দাঁড়ায় সাত কোটি ২০ লাখ ৫৩ হাজার ৫২০ টাকা।

ভিসার আশায় মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকা ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, ঠিক কী কারণে ভিসা পেতে এই দীর্ঘসূত্রতা? এর উত্তর খুঁজতে অনুসন্ধান করা হয়। এতে উঠে আসে দালালচক্রের সঙ্গে যোগসাজশে ভিএফএসের অনিয়ম-দুর্নীতির ভয়াবহতা। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিসা আবেদনের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতেও কর্মীপ্রতি গুনতে হয় লাখ টাকা।

অনুসন্ধান করতে গিয়ে সামনে আসে একটি নথি। এতে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট রাত ১২টা ৪৯ মিনিট থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত স্লট ওপেন করে ৭৮টি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং দেওয়া হয়। ভিএফএসের ব্যবস্থাপক সাবিকুন্নাহারের ইউজার আইডি (ভিএফএস গ্লোবাল সাবিকুন্নাহ) ব্যবহার করা হয়। এমনকি সব অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হয় একই আইপি অ্যাড্রেস (১০.১৫০.১০০.১৯) থেকে। এই অ্যাপয়েন্টমেন্টের একটি শিটও  হাতে এসে পৌঁছেছে। এখানে দেখা যায়, ‘এন্ট্রি নেম’-এর জায়গায় কোনো কর্মীর নাম নেই। সব জায়গায় লেখা ‘এলোকেশন ফর সেন্টার’। এমনকি ‘এন্ট্রি কলাম নেম’-এর জায়গায় ‘টোটাল সিটস’ লেখা রয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে অর্থাৎ অফিস চলাকালে স্লট ওপেন করা হয়ে থাকে। মধ্যরাতে স্লট খোলার বিষয়টি অস্বাভাবিক। এতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট জালিয়াতিতে ভিএফএসের যুক্ত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ভিএফএসের অনিয়মের এখানেই শেষ নয়। সাধারণত চট্টগ্রাম কার্যালয়ে দিনে ২০ জনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। গত ৬ মে অতিরিক্ত ২০ জন ভিসাপ্রত্যাশী ভিএফএস চিটাগংয়ের অসংগতিপূর্ণ তথ্য সংবলিত মেসেজ পান, নিয়ম ভেঙে তাঁরাও একই দিনে অ্যাপয়েন্টমেন্টের সুযোগ পান।

অনুসন্ধান বলছে, ভিসাপ্রার্থীদের অনলাইনে আবেদনের পথেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে ভিএফএস। একজন ভিসাপ্রার্থীকে নুলস্তা পাওয়ার পর পাসপোর্ট জমা দিতে অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য অনলাইনের মাধ্যমে ভিএফএসের কাছে আবেদন করতে হয়। এ সময় আবেদনকারীর মোবাইল ফোনে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) আসে, যার মেয়াদ থাকে তিন মিনিট। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, তাঁদের ফোনে এই ওটিপি আসতে ৯ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যায়। ততক্ষণে আবেদনের প্রক্রিয়াটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। অথচ দালালের মাধ্যমে আবেদনে ওটিপির দরকার পড়ে না।

গত ১২ মে বিকেল ৩টায় ছদ্মবেশে আবেদনকারী সেজে রাজধানীর গুলশান ১ নম্বরে নাফি টাওয়ারে অবস্থিত ভিএফএস গ্লোবালের কার্যালয়ের সামনে যায় অনুসন্ধানী দল। কিছুক্ষণ অবস্থান করতেই দেখা মেলে ওয়াহাব শিকদার নামের এক দালালের। জানতে চান অ্যাপয়েন্টমেন্ট লাগবে কি না। হ্যাঁ-সূচক জবাব দিতেই তিনি নিয়ে যান জমাদ্দার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামের একটি অফিসের নিচে। সেখানে তিনি পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর বস মামুন শেখের সঙ্গে।

অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে কী করতে হবে জানতে চাইলে মামুন শেখ নিজ থেকেই একে একে বলতে থাকেন করণীয় কী। তিনি এ সময় বলেন, ‘নুলস্তা যদি সঠিক হয় তাহলে আপনারা ডেট পাবেন। আমি আপনাকে বলি, মেইল করতে পয়সা লাগে না। কিন্তু আপনার প্রক্রিয়া জানতে হইব। লোক থাকতে হইব। আমরা ২৫ হাজার টাকা নিই। প্রথম যেদিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেব সেদিন আমরা পাঁচ হাজার টাকা নেব। বাকি ২০ হাজার টাকা আমরা পরে নিই। টাইম আমার ১৫ দিনও লাগে ২০ দিনও লাগে। কিন্তু আমরা ১০০ শতাংশ পাই।’ মামুন যে এরই মধ্যে অর্থের বিনিময়ে অনেককে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাইয়ে দিয়েছেন, এর কয়েকটি নমুনাও দেখালেন।

ভিসার আশায় ঘরে ঘরে হাহাকার

ইতালিসহ ইউরোপের দেশগুলোতে প্রবেশ করতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা যাচ্ছেন বহু অভিবাসনপ্রত্যাশী। এ তালিকায় অন্যতম অবস্থান বাংলাদেশের। সর্বশেষ ১৪ ফেব্রুয়ারি সমুদ্রে ডুবে মারা যান আটজন বাংলাদেশি। সমুদ্রপথে অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে ‘ডিক্রেটো ফ্লুসি’র অধীনে বিপুলসংখ্যক কর্মী নিচ্ছে ইতালি। ইতালিতে সাধারণত বাংলাদেশি কর্মীদের চাহিদা অনেক বেশি। বৈধ পথে সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় অনেকের মনে আশার সঞ্চার হলেও ভিএফএসের কাছে জিম্মি হয়ে লাখো কর্মী এখন হতাশায় নিমজ্জিত। ফলে অনেকে আবার পা বাড়াচ্ছেন অবৈধ পথে।

১৩ মে সরেজমিনে গেলে ভিএফএস গ্লোবাল কার্যালয়ের সামনে কথা হয় সৌদিপ্রবাসী মানিকগঞ্জের সিংগাইয়ের বাসিন্দা শাহিন খানের সঙ্গে। ১০ লাখ টাকা জমা দিয়ে নুলস্তা পেয়েছিলেন। এরপর ভিসা পেতে সৌদি থেকে দেশে ফিরে গত বছরের ৮ অক্টোবর পাসপোর্ট জমা দেন ভিএফএসে। কদিন পর পর খোঁজ নিতে আসেন। এদিনও তিনি হতাশ হয়ে বের হন ভেতর থেকে।

শাহিন খান বলেন, ‘৯ মাসেও পাসপোর্ট ফেরত পাইনি। সামনের মাস পর্যন্ত সৌদি আরবের ভিসা রয়েছে। এখন যদি আমার ভিসা না দিয়ে পাসপোর্ট ফেরত দেয় তা-ও সৌদি যেতে পারব। নইলে দুই কুলই হারাতে হবে। পাসপোর্টের আশায় এ পর্যন্ত অনেকবার এসেছি। তাদের কাছে এলে বলে—আমরা আপনাকে জানাব, তখন আসবেন। এখন কবে যে জানাবে সেটাই তো বলে না। আগামী মাসের ৬ তারিখের আগে যদি আমি পাসপোর্ট ফেরত না পাই, তাহলে আমার সব দিক শেষ হয়ে যাবে।’

দিনভর সেখানে অবস্থান করে আরো কয়েকজন ভুক্তভোগীর দেখা পায় । তাঁদের মধ্যে আছেন সিংগাইরের আরেক ভুক্তভোগী মো. শরিফ। তিনি বলেন, ‘আমি ইতালি যাব বলে এখন কোনো কাজে যুক্ত হতে পারছি না। ৯ মাস ধরে আমার পাসপোর্ট আটকে রয়েছে। হয় আমাদের ভিসা দিক, না হয় পাসপোর্টগুলো ফেরত দিয়ে দিক। পাসপোর্ট ফেরত দিলেও আমরা অন্য দেশে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে পারি। এখন তো কোনো কিছুই করতে পারছি না।’

শরীয়তপুরের বাসিন্দা মাসফিক জামান বলেন, ‘আমরা এলে শুধু বলে, পাসপোর্ট ফেরতের মেসেজ যেদিন আসবে সেদিন আসবেন। আমাদেরকে ভেতরে ঢুকতেই দেয় না। কবে যে পাসপোর্ট ফেরত পাব তারও কোনো ধরনের তথ্য তারা দিচ্ছে না। আমরা না যেতে পারছি ইতালি, না দেশে কিছু করতে পারছি। সব জায়গায় টাকা-পয়সা দিয়ে আমরা বসে আছি।’

দুবাইফেরত নোয়াখালীর জাকির হোসেন জানান, দালালকে টাকা দিয়েও পাসপোর্ট ফেরত পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার সময় এক দালালকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। এখন সে ইতালি চলে গেছে। আমার পরিচিত একজন ২০ হাজার টাকা দিয়ে পাসপোর্ট বের করতে পেরেছে। কিন্তু সে আমাকে সেই দালালের পরিচয় দিচ্ছে না। আমি জমি বিক্রি করে ১৩ লাখ টাকা দিয়ে নুলস্তা নিয়েছি। ভিসা না পেলে আমার সব শেষ হয়ে যাবে।’

ভিএফএসের প্রিমিয়াম সার্ভিসের নামে বছরে লোপাট ৭ কোটি টাকা

ভিএফএস গ্লোবালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিসা প্রসেসিং বাবদ সাধারণ সার্ভিসে ১৭ হাজার ৯৮০ টাকা এবং প্রিমিয়াম সার্ভিসে ২২ হাজার ৩১৮ টাকা নিয়ে থাকে। প্রিমিয়াম সার্ভিসে কর্মীর কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পাশাপাশি ছবি তোলা এবং ফরম পূরণ করে দেওয়া হয়। সঙ্গে একটি মাফিন কেক, লেক্সাস বিস্কুট ও ফ্রুটিকা জুস দিয়ে আপ্যায়ন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রিমিয়াম সার্ভিসের মধ্যে একটি বড় সার্ভিস হলো হোম ডেলিভারি। অর্থাৎ কেউ যদি বাসা থেকে তার কাগজপত্র ভিএফএস গ্লোবালে পাঠিয়ে দিতে চায় এবং তার পাসপোর্ট বাসায় দিয়ে যাবে এই সার্ভিস নিতে চায়, তবে সে এই সার্ভিসটি নিতে পারবে।

সেবার মানে বড় ফারাক থাকার পরও ভারতের চেয়ে কর্মীপ্রতি তিন হাজার ৮৯৯ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশে। দেশে প্রতিদিন তিনটি শহরে ৭০ জনকে প্রিমিয়াম সার্ভিস দিয়ে থাকে ভিএফএস গ্লোবাল। মাসে ২২ দিন তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এ থেকে দেখা যায়, প্রিমিয়াম সার্ভিসের নামে প্রতিদিন দুই লাখ ৭২ হাজার ৯৩০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে, যা প্রতি মাসে গিয়ে দাঁড়ায় ৬০ লাখ চার হাজার ৪৬০ টাকা এবং বছরে সাত কোটি ২০ লাখ ৫৩ হাজার ৫২০ টাকা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিসাপ্রত্যাশীদের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য সরবরাহ করে না ভিএফএস। অ্যাপয়েন্টমেন্ট কবে পাবেন, তাঁদের পাসপোর্ট এত দিন আটকে রাখার কারণ, আদৌ ভিসা সরবরাহ করা হবে কি না—এসব বিষয়ে ভিসাপ্রত্যাশীদের কিছুই অবগত করে না সংস্থাটি। এমনকি ভিএফএসের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য খুদে বার্তা ছাড়া আর কোনো মাধ্যমও নেই। ফলে মাসের পর মাস এমন দোটানায় পড়ে নাজেহাল হয় আবেদনকারী বা তাঁর পরিবার।

সেবার ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে আরো তারতম্য লক্ষ করা গেছে। ভিএফএস গ্লোবাল ভারত ও বাংলাদেশের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, বাংলাদেশে ছয় মাসের মধ্যে নুলস্তার মেয়াদ থাকলে ভিএফএস গ্লোবালে আবেদন করতে পারে। তবে ভারতে নুলস্তার মেয়াদ ১৫ দিনের বেশি হয়ে গেলে তারা সরাসরি ভিএফএস গ্লোবালের অফিসে যোগাযোগ করতে পারে। সে সময় তাদের আবেদন গ্রহণ করা হয়। ভারতে ভিএফএস গ্লোবালের ডাইনামিক ডিজিটাল ভেরিফিকেশন নামের একটি সফটওয়্যার রয়েছে। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে আবেদনকারীরা তাঁদের ভিসা কার্যক্রমের কাগজপত্রে কোনো ভুল-ত্রুটি থাকলে তা ভিসা প্রক্রিয়ার মধ্যে ঠিক করে ফেলতে পারেন। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এই সফটওয়্যার আনা হয়নি। ভারতে একজন কর্মীর ভিসা প্রক্রিয়া হতে সময় নির্ধারণ করা হয় ৯০ দিন, অর্থাৎ তিন মাস। আর বাংলাদেশে ভিসা প্রক্রিয়ায় সময় নির্ধারণ করা হয় ১২০ দিন, অর্থাৎ চার মাস।

এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলতে ভিএফএস কার্যালয়ে গেলে কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। একাধিকবার চেষ্টার পর ফোনে পাওয়া যায় ভিএফএস গ্লোবালের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর শান্তনু ভট্টাচার্যকে। মধ্যরাতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্লট চালু করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, ‘এ রকম স্লট ওপেনই হয়নি। এই তথ্য সঠিক নয়। স্লট কখনোই ম্যানুয়ালি ওপেন হয় না।’

চট্টগ্রামে অতিরিক্ত ২০ জনের অ্যাপয়েন্টের বিষয়টি অবগত করলে তিনি বলেন, ‘এভাবে বললে তো হয় না।’ এরপর এ বিষয়ে কথা বলতে আপত্তি জানান তিনি। তবে তিনি এ বিষয়ে সরাসরি অফিসে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

জানতে চাইলে অভিবাসন গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর চেয়ারপারসন ড. তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, ‘যাঁরা অনিয়মের পথ ধরে যাচ্ছেন তাঁরা ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে দালালকে অর্থ দিয়ে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু যাঁরা বৈধভাবে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে ইতালি যেতে চান, তাঁদের জন্য যে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করা হচ্ছে তা বৈধ পথের অভিবাসনের একটি বড় অন্তরায়। এ ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকার বিএমইটির মাধ্যমে এ বিষয়ে তদন্ত করে দ্রুত সমাধান বের করতে পারে। আমাদের আইনি ব্যবস্থা আছে। সেটার প্রয়োগ করতে হবে। সরকার চাইলে অবশ্যই এর প্রতিকার আসবে।’ সূত্র: কালের কণ্ঠ

Daily World News

ডক্টরেট ডিগ্রি পেল ম্যাক্স নামের বিড়াল

ডক্টরেট ডিগ্রি পেল ম্যাক্স নামের বিড়াল

//দৈনিক বিশ্ব আন্তর্জাতিক ডেস্ক//

একটি বিড়ালকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়েছে।

বিড়ালটির নাম ম্যাক্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে এ ডিগ্রি দেওয়া হয়। খবর এপির।

রোববার এক প্রতিবেদনে বলা হয়- অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের রিপোর্ট অনুসারে, ম্যাক্স নামের ওই বিড়ালটিকে ইঁদুর শিকার বা ঘুমানোর কৃতিত্বের জন্য নয় বরং ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাসেলটন ক্যাম্পাস তাকে এ সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে তার বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের স্বীকৃতির জন্য।

ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাসেলটন ক্যাম্পাস এক ফেসবুক পোস্টে বলেছে, ম্যাক্স বছরের পর বছর ধরে ক্যাসেলটন পরিবারের একজন স্নেহময় সদস্য।

ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারের রাস্তায় পাশেই বাস করে এক পরিবার। সেই পরিবারই এই বিড়ালটির মালিক।

বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডাও বলেন, বিড়ালটি নিজেই ঠিক করেছিল সে ক্যাম্পাসে যাবে। এরপর থেকেই সে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করে, আর শিক্ষার্থীরাও তাকে ভালোবাসতে শুরু করে।

ম্যাক্স নামের ওই বিড়ালটি গত প্রায় চার বছর ধরে ক্যাম্পাসের অংশ হয়ে রয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা যখনই তাকে তাদের পথের ধারে বিড়ালটিকে দেখতে পায় তখনই তারাও খুশি হয়। এমনকি শিক্ষার্থীরা আনন্দে ওই বিড়ালের সঙ্গে প্রায়ই ছবিও তোলে।

এমনকি সাবেক শিক্ষার্থীরাও যখনই ক্যাম্পাসে আসেন তখন তারাও বিড়ালটির খোঁজ নিতে তার মালিক ডাওয়ের কাছে যান।

অবশ্য ম্যাক্সের এই ডিগ্রিটি তার মালিক ডাওয়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক অনুষ্ঠানে বিড়ালকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা নেই ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির।

ইউক্রেন সেনাদের হটিয়ে বেশ ভেতরে রুশ বাহিনী/ খারকিভ যুদ্ধক্ষেত্র

//দৈনিক বিশ্ব আন্তর্জাতিক ডেস্ক//

সম্প্রতি ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলে দেশটির সেনাদের হটিয়ে বেশ ভেতরে ঢুকেছে রুশ বাহিনী। দখল করে নিয়েছে বেশ কিছু এলাকা। এমন পরিস্থিতিতে তাদের রুখে দিতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ইউক্রেনের সেনারা। তীব্র এই যুদ্ধের মধ্যে খারকিভে আসলে কী ঘটছে, তা দেখতে অঞ্চলটিতে গিয়েছেন বিবিসির প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংবাদদাতা জোনাথন বেল। নিজ চোখে দেখা সব অভিজ্ঞতা পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন তিনি।

ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের লিপৎসি গ্রামের দিকে দ্রতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম আমরা। গ্রামটি বর্তমানে অবরোধ করে রেখেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। গ্রামটি অঞ্চলের রাজধানী খারকিভ শহরের উত্তরে। ইউক্রেন বাহিনীকে হটিয়ে সীমান্তবর্তী এই এলাকায় প্রবেশ করেছেন রুশ সেনারা।

আমাদের সঙ্গে ছিলেন ইউক্রেনের ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা। লিপৎসি গ্রাম ঘিরে রাশিয়ার অগ্রগতি রুখে দিতে তাঁদের সেখানে পাঠানো হচ্ছে। এর আগে তাঁরা পূ্র্বে রুশ বাহিনীর সঙ্গে তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এখন তাঁদের আরও উত্তরে সরিয়ে আনা হচ্ছে। কোনো বিশ্রাম ছাড়াই যুদ্ধ করে যাচ্ছেন এই সেনারা।

এই সেনাসদস্যদের যেখানে মোতায়েন করা হবে, সেখানে পৌঁছালাম আমরা। এর অবস্থান যুদ্ধের সম্মুখসারি থেকে মাত্র এক মাইল দূরে। আমাদের কানে ভেসে আসছিল কামানের গোলার শব্দ। জ্বলতে থাকা আগুনের কুণ্ডলী পেরিয়ে আমরা একটি বাংকারের দিকে দৌড় দিলাম। সেখানেই আমাদের আশ্রয় নিতে বলা হয়েছিল।

বাংকারের নিচে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে আলো-আঁধারির মধ্যে ইউক্রেনের একদল সেনাসদস্যকে দেখতে পেলাম। ড্রোন থেকে নেওয়া ভিডিও চিত্র খতিয়ে দেখছিলেন তাঁরা। তারপর সে অনুযায়ী কামান থেকে হামলা চালানোর নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। আন্দ্রি নামের একজন সেনাসদস্য বললেন, এই লড়াইয়ের মধ্যে কখন কী হবে, তা অনুমান করা কঠিন।

আন্দ্রেই হঠাৎ বললেন, ‘এইমাত্র আমাদের অবস্থানের কাছেই শত্রুদের উপস্থিতি দেখতে পেয়েছেন ড্রোনের পাইলট।’ তারপর সেখান থেকে দ্রুত আমাদের সরে যেতে বলা হলো।

আমাদের বলা হয়েছিল, বাংকারে আমরা বেশিক্ষণ থাকতে পারব না। সেখানে মাটির নিচেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আমি আন্দ্রির কাছে জানতে চাইলাম, তিনি এবং তাঁর দলের সদস্যরা এখানে আসার ফলে যুদ্ধে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না? জবাবে তিনি বললেন, তুলনামূলক কিছুটা হয়তো এসেছে। তবে নতুন কোনো জায়গায় গিয়ে লড়াইয়ে অংশ নেওয়াটা কঠিন।

আমাদের কথোপকথন চলাকালে বাইরে আঁধার ঘনিয়ে আসছিল। অন্ধকারের মধ্যেও বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে রুশ বাহিনীর গতিবিধি ভিডিও করে পাঠাচ্ছিল ইউক্রেনের ড্রোনগুলো। আন্দ্রেই হঠাৎ বললেন, ‘এইমাত্র আমাদের অবস্থানের কাছেই শত্রুদের উপস্থিতি দেখতে পেয়েছেন ড্রোনের পাইলট।’ তারপর সেখান থেকে দ্রুত আমাদের সরে যেতে বলা হলো।

রাশিয়ার সেনাসংখ্যা অনেক বেশি

এরপর আমরা গেলাম যুদ্ধের সম্মুখসারির বেশ পেছনে একটি অস্থায়ী হাসপাতালে। সেখানে আহত ইউক্রেনীয় সেনাদের চিকিৎসা চলছিল। তাঁদের একজন ভিক্তর। মর্টার বিস্ফোরণে কয়েকটি আঙুল হারিয়েছেন। হাসপাতালের একটি বিছানায় কম্বল গায়ে শুয়ে ছিলেন তিনি।

নিজের চেয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ফেলে আসা দলের সদস্যদের নিয়ে বেশি বিচলিত হয়ে পড়েছেন ভিক্তর। তিনি বললেন, ‘দলের সদস্যদের ছাড়া আমি থাকতে পারছি না। তাঁরা আমার বন্ধু। আমার দ্বিতীয় পরিবার।’ ভিক্তর জানালেন, যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁদের কাছে আবার ফিরে যেতে চান তিনি।

যুদ্ধে রুশ বাহিনীও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ছে। তবে তাদের সেনাসংখ্যা অনেক বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, খারকিভ সীমান্তের ওপারে ৩০ হাজারের বেশি রুশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এই অঞ্চলে যুদ্ধের সম্মুখসারিতে রাশিয়ার তুলনায় ইউক্রেনের সেনা কম। অস্ত্রশস্ত্রের দিক দিয়েও পিছিয়ে রয়েছে তারা।

ভিক্তর বললেন, রাশিয়ার বাহিনী একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল। তাদের সেনাসংখ্যাও অনেক। যুদ্ধে রুশ সেনারা যা যা চান, তার সবকিছুই তাঁদের দেওয়া হচ্ছে। আর ইউক্রেনের সেনাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য কিছুই নেই। তারপরও তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তায় বিলম্ব যুদ্ধটাকে ইউক্রেনীয় সেনাদের জন্য আরও কঠিন করে তুলেছে। গড় হিসাবে বর্তমানে ইউক্রেনের তুলনায় ১০ গুণ বেশি কামানের গোলা ছোড়ার সক্ষমতা রয়েছে রুশ বাহিনীর। কিয়েভের সামনে এখন একমাত্র আশা—মার্কিন অস্ত্র হাতে পেলে তাদের এই সংকট অনেকটা দূর হবে।

প্রতিরোধের এলাকা বাড়ছে

খারকিভের ভোভচানস্ক শহরে গাছপালার ভেতরে গোপন জায়গায় কামান মোতায়েন করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ৫৭তম ব্রিগেড। শহরটি রক্ষায় সেখান থেকে দিনে ৫০ থেকে ১০০টি গোলা ছোড়া হয়। আমরা সেখানে গিয়ে দেখলাম, সেনারা গোলার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিছুক্ষণ বাদে ছোট একটি গাড়িতে করে ২০টি গোলা আনা হলো। এ দিয়ে তাঁরা আরও কয়েক ঘণ্টা হামলা চালাতে পারবেন।

৫৭তম ব্রিগেডের এই দলটিকে আগে আরও উত্তরে মোতায়েন করা ছিল। এখন তাদের খারকিভ রক্ষার জন্য আনা হয়েছে। দক্ষিণে রোবোতিন গ্রাম থেকে আনা হয়েছে আরেকটি ব্রিগেডের সেনাদের। ওই গ্রামটির দিকেও অগ্রসর হচ্ছে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার হামলার মুখে ইউক্রেন বাহিনীকে এখন আরও বেশি এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তায় বিলম্ব যুদ্ধটাকে ইউক্রেনীয় সেনাদের জন্য আরও কঠিন করে তুলেছে। গড় হিসাবে, বর্তমানে ইউক্রেনের তুলনায় ১০ গুণ বেশি কামানের গোলা ছোড়ার সক্ষমতা রয়েছে রুশ বাহিনীর।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে বেশ কিছু অঞ্চল দখলে করে নেয় রাশিয়া। এরপর গত বছর পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে সামান্য কিছু অঞ্চল মুক্ত করতে সক্ষম হয় কিয়েভ। এখন সেই অর্জনটাও হারাতে বসেছে তারা। নতুন কোনো অঞ্চল মুক্ত করা নয়, রুশ বাহিনীকে প্রতিরোধ করাই এখন তাদের জন্য দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

খারকিভে ইউক্রেনীয় সেনাসংখ্যা বাড়ানোর পর রুশ বাহিনীর অগ্রগতি কিছুটা হলেও ঠেকাতে সক্ষম হচ্ছে কিয়েভ। তবে এখানে একটি প্রশ্ন উঠেছে। তা হলো পুরো ইউক্রেনে যুদ্ধের সম্মুখসারি ১ হাজার ২৮৭ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। খারকিভে সেনা সরিয়ে আনার ফলে ওই সব অঞ্চলে প্রভাবটা কী হতে পারে?

খারকিভে যেসব এলাকায় রুশ বাহিনী সম্প্রতি অগ্রগতি পেয়েছে, সেখান থেকে তাদের পুরোপুরি পিছু হটানো কঠিন হবে। তবে আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে রাশিয়ার এই অগ্রগতি ঠেকানো যেত বলে মনে করেন ইউক্রেনের আর্টিলারি বাহিনীর কমান্ডার মিখাইলো। তিনি বলছিলেন, ‘আমরা ভোভচানস্ক শহর হারাতে বসেছি। এর আশপাশের গ্রামগুলোও হারানোর পথে। আমরা গাছের গুঁড়ি ও কংক্রিট ব্যবহার করেই (রুশ সেনাদের) প্রতিরোধ করতে পারতাম। এখন আমাদের কামানের গোলা ব্যবহার করতে হচ্ছে এবং অন্যত্র থেকে এখানে সেনাদের সরিয়ে আনতে হচ্ছে।’

Daily World News

রামপালে চক্ষুশিবিরে বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশনের জন্য ৫০০ রোগী বাছাই 

লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার আজ ভোট দেবে প্রায় ১৮ কোটি ভোটার

//দৈনিক বিশ্ব আন্তর্জাতিক ডেস্ক//

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণ চলছে। সোমবার (১৩ মে) স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।

এই দফায় দেশটির ১০ রাজ্যের ৯৬টি আসনে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এর মধ্যে অন্ধ্র প্রদেশের ২৫, তেলেঙ্গানার ১৭, উত্তর প্রদেশের ১৩, মহারাষ্ট্রের ১১ এবং মধ্যপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের আটটি আসনে ভোট হচ্ছে। এছাড়া বিহারের পাঁচটি, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডে চারটি করে এবং জম্মু ও কাশ্মীরের একটি আসনে ভোট হচ্ছে।

৯৬টি আসনে মোট ভোটার ১৭ কোটি ৭০ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ৯৭ লাখ আর নারী ৮ কোটি ৭৩ লাখ। ভোটের দায়িত্বে আছেন ১৯ লাখেরও বেশি কর্মী।

এই ধাপে বিরোধীদলীয় নেতা কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, সমাজবাদী পার্টির শীর্ষ নেতা অখিলেশ যাদব, অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন নেতা আসাদউদ্দিন ওয়েইসি-সহ ১ হাজার ৭১৭ প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। তারকা প্রার্থীদের মধ্যে আরও রয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান, কীর্তি আজাদ, শত্রুঘ্ন সিনহা, মহুয়া মৈত্র, অমৃতা রায়, অভিনেত্রী শতাব্দী রায় ও বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ।

ভারতে মোট সাত দফায় লোকসভা নির্বাচন হবে। ইতোমধ্যে তিন দফার ভোট শেষ হয়েছে। প্রথম তিনটি পর্বে তুলনামূলকভাবে কম ভোটদানের হার, হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রাজনীতি এবং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ খবরের শিরোনামজুড়ে থাকলেও চতুর্থ পর্বের শেষে ভারতের নির্বাচনী রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেয়, দেশটি এখন সে দিকেই তাকিয়ে। তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণের মাধ্যমে ভারতের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি আসনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়।