ইউক্রেনের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশপাশে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সৈন্যদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ভবনে রাশিয়ার বোমা হামলায় সেখানে আগুন ধরে যায়।
জেপোরোজিয়ার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
এদিকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বলছে, তারা ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন এবং জানতে পেরেছেন যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির অপরিহার্য অংশগুলো এখনো চলমান আছে।
পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশেপাশে সংঘাত থামানোর জন্য আহবান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা।
এদিকে জেপোরোজিয়া অঞ্চলের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইউক্রেন থেকে ৪২৮ জন বাংলাদেশি সীমান্ত পার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪০০ জন পোল্যান্ডে, হাঙ্গেরিতে ১৫ ও তিনজন রোমানিয়ায় রয়েছেন।
রোববার পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও রোমানিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের বরাত দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে জানানো হয়, এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি নিরাপদে ইউক্রেন সীমান্ত পার হয়ে পোল্যান্ডে পৌঁছেছেন। তাদের মধ্যে ৪৬ জন বাংলাদেশি ওয়ারশতে বাংলাদেশ দূতাবাসের অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন।
দূতাবাস ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রসের (আইসিআরসি) মাধ্যমে ইউক্রেনের ২৮ প্রবাসী নাগরিককে উদ্ধার ও দেশটির কারাগারে আটক বাংলাদেশিদের সরিয়ে নেওয়ার জন্যও কাজ করছে।
এরই মধ্যে প্রায় ১৫ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হাঙ্গেরিতে পৌঁছেছেন। তাদের এখন ভিয়েনা দূতাবাস দেখাশোনা করছে। কয়েক দিনের মধ্যে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তারাও এখন বাংলাদেশে ফিরতে ইচ্ছুক।
এছাড়া এখন পর্যন্ত তিনজন বাংলাদেশি রোমানিয়ায় প্রবেশ করেছেন। তাদের দেখাশোনা করছে এখন বুখারেস্টে বাংলাদেশ দূতাবাস। দ্রুত আরও সাত বাংলাদেশি রোমানিয়ায় প্রবেশ করবে। বাংলাদেশ সরকার তাদের প্রত্যাবাসনে কাজ করছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের তথ্য ও জরুরি যোগাযোগের জন্য কয়েকটি হটলাইন নম্বর দিয়েছে দূতাবাস।
সম্প্রতি পূর্ব ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর নির্দেশের আগে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ইউক্রেন থেকে পালানো লোকের সংখ্যা এখন ৩,৬৮,০০০ ছাড়িয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচ সিআর বলছে, ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ ও যুদ্ধের কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালানো লোকের সংখ্যা এখন ৩,৬৮,০০০-এ পৌঁছেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচ সিআর বলছে, ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ ও যুদ্ধের কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালানো লোকের সংখ্যা এখন ৩,৬৮,০০০-এ পৌঁছেছে।
বিবিসির সংবাদদাতাদের খবর অনুযায়ী ইউক্রেন থেকে এ পর্যন্ত ১৫০,০০০-এরও বেশি লোক পালিয়ে পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে।
অন্যদিকে গত তিন দিনে ইউক্রেন থেকে রোমানিয়ায় পালিয়েছে ৪৩,০০০ -এরও বেশি মানুষ।
ইউক্রেন থেকে পালানো লোকের সংখ্যা এখন ৩,৬৮,০০০ ছাড়িয়েছে।
ইউক্রেনের মন্ত্রীর দাবি : ৪,৩০০ রুশ সৈন্য নিহত
ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রীহানা মালিয়ার এক ফেসবুক পোস্টে যুদ্ধে রুশ ক্ষয়ক্ষতির একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন
ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রীহানা মালিয়ার এক ফেসবুক পোস্টে যুদ্ধে রুশ ক্ষয়ক্ষতির একটি তালিকা প্রকাশ করে দাবি করেছেন যে ৪.৩০০ জন রুশ সৈন্য এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে।
বিবিসি এ দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি, এবং রাশিয়া এখন পর্যন্ত হতাহতের কোন সংখ্যা প্রকাশ করেনি।
ইউক্রেনের মন্ত্রীর দেয়া তালিকায় ৪,৩০০ রুশ সৈন্য নিহতের কথা ছাড়াও ২৭টি বিমান, ২৬টি হেলিকপ্টার, ১৪৬টি ট্যাংক, ৭০৬টিসাঁজোয়া যান, ৪৯টি কামান এবং আরো কিছু সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্র ধ্বংসের কথা বলা হয়।
নানা দিক থেকে এগুচ্ছে রুশ বাহিনী, ইউক্রেনের ‘শক্ত প্রতিরোধ’
একাধিক দিক থেকে রুশ বাহিনী এগিয়ে আসতে থাকলেও তারা ইউক্রেনের বাহিনীর “শক্ত প্রতিরোধের” সম্মুখীন হচ্ছে
ব্রিটিশ গোয়েন্দা সূত্রের খবর অনুযায়ী রাজধানী কিয়েভে গত রাতেও লড়াই হয়েছে তবে শহরটির কেন্দ্রস্থল এখন শান্ত, তবে কারফিউ চলছে।
ব্রিটেনের সূত্রগুলো বলছে, একাধিক দিক থেকে রুশ বাহিনী এগিয়ে আসতে থাকলেও তারা ইউক্রেনের বাহিনীর “শক্ত প্রতিরোধের” সম্মুখীন হচ্ছে
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওলেগ নিকোলেংকো বলছেন,রাজধানী কিয়েভ লক্ষ্য করে নিক্ষিপ্ত একটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে তাদের বিমানবাহিনী
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা খবর ও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে – কিয়েভ শহরের উত্তর-পশ্চিমে বুশা্ নামে একটি উপশহরে এখন যুদ্ধ চলছে। রাস্তায় রুশ সৈন্যদের দেখা যাচ্ছে, এব ভিডিওতে মেশিনগানের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। বিবিসি এর সত্যতা এখনো যাচাই করতে পারেনি।
ইউক্রেনের আরো কিছু শহর ও অবকাঠামোর ওপর রাশিয়া আক্রমণ চালিয়েছে।
খেরসন এবং বেরদিয়ানস্কশহর দুটি অবরোধ করে রুশ বাহিনী।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রইগর কোনাশেনকভ বলেছেন, খেরসন শহরের কাছে চরনোবাইভকা বিমানঘাঁটি এবং হেনিচেস্ক নামে আরেকটি শহর এখন রুশ নিয়ন্ত্রণে।
তিনি আরো বলেন, রাশ বাহিনী শনিবার বিমান ও সাগর থেকে নিক্ষিপ্ত ক্রুজ মিসাইল দিয়ে ইউক্রেনের সামরিক অবকাঠামোতে আঘাত হেনেছে।
খারকিভ শহরে একটি রুশ সামরিক যানে আগুন জ্বলছে
ইউক্রেনের সাথে আলোচনার জন্য মিনস্কে রুশ প্রতিনিধিদল, রাজি নন জেলেনস্কি
ইউক্রেনের সাথে আলোচনার লক্ষ্য নিয়ে একটি রুশ প্রতিনিধিদল বেলারুসের রাজধানী মিনস্ক এসে পৌঁছেছে।
দৃশ্যতঃ ইউক্রেনের সাথে আলোচনার লক্ষ্য নিয়ে একটি রুশ প্রতিনিধিদল বেলারুসের রাজধানী মিনস্ক এসে পৌঁছেছে।
কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি বলেন – রাশিয়া যদি বেলারুসের ভূখন্ড ব্যবহার করে ইউক্রেনের ওপর আক্রমণ না চালাতো, তাহলে মিনস্কে বসে আলোচনা করা যেতো।
তবে মি. জেলেনস্কি বলেছেন অন্য কোন জায়গায় এ আলোচনা হতে পারে।
“অবশ্যই আমরা শান্তি চাই, বৈঠক চাই, যুদ্ধ শেষ হোক এটা চাই। ওয়ারস’, ব্রাতিস্লাভা, বুদাপেস্ট, ইস্তাম্বুল, বাকু – এসব জায়গার কথা আমরা রাশিয়ার কাছে প্রস্তাব করেছি” – বলেন তিনি।
মি. জেলেনস্কি বলেন – “অন্য যে কোন শহরেও আলোচনা হতে – এমন কোন দেশ যেখান থেকে আমাদের ওপর মিসাইল ছোঁড়া হচ্ছেনা।“
রাশিয়ার কিছু ব্যাংককে ‘সুইফট’ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে
‘সুইফট’ থেকে রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করতে একমত হয়েছে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র দেশগুলো।
আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা ‘সুইফট’ থেকে রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারে একমত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র দেশগুলো।
ইউরোপিয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, পুতিন সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিদেশে নাগরিকত্ব নেয়া ঠেকাতে তথাকথিত ‘গোল্ডেন পাসপোর্টের’ বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একটি দেশ থেকে আরেকটি দেশের ব্যাংকে আর্থিক লেনদেন করতে সুইফট ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়।
তেল ও গ্যাস রপ্তানির মাধ্যমে রাশিয়া যে অর্থ আয় করে, সেই অর্থ আদায়ে দেশটি সুইফটের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
জার্মান সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, রাশিয়ান এসব ব্যাংকে বৈদেশিক অর্থ লেনদেন বন্ধ করাই তাদের এই উদ্যোগের মুল উদ্দেশ্য। কিন্তু রাশিয়ার সাথে ব্যবসা রয়েছে, এমন পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোও এর ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
বেলজিয়াম ভিত্তিক সুইফট বিশ্বের এগারো হাজার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
আন্তর্জাতিক ব্যাংকিংএ আর্থিক লেনদেন করতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করা হয়
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে ঢুকে পড়েছে রুশ বাহিনী
শহরের প্রতিরোধ বেষ্টনী ভেদ করেছে এবং সেখানে তাদের সাথে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর লড়াই চলছে বলে খবর আসছে।
দক্ষিণের মেলিতোপোল দখল করে নেবার পর এবার ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে প্রবেশ করেছে রাশিয়ান সেনাবাহিনী, বলছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ।
রাশিয়ান সেনারা শহরের প্রতিরোধ বেষ্টনী ভেদ করেছে এবং সেখানে তাদের সাথে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর লড়াই চলছে বলে খবর আসছে।
রাশিয়ান সেনারা খারকিভ শহরের প্রতিরোধ বেষ্টনী ভেদ করেছে
রাতভর মিসাইল হামলার পর রাশিয়ান বাহিনী শহরটিতে প্রবেশ করলো।
মিসাইল হামলায় একটি নয় তলা আবাসিক ভবন ধসে পড়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার জরুরি বিভাগ। ভবনটির বেজমেন্টে আশ্রয় নেয়ার কারণে ৬০ জনের মতো বাসিন্দার প্রাণ রক্ষা হয়েছে। তবে বয়স্ক একজন নারী মারা গেছেন।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের তৃতীয় দিনে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে দেশটির সেনাবাহিনী। শনিবার সকাল থেকে রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে রাস্তায় রাস্তায় তুমুল লড়াই শুরু হয়েছে। কিছুক্ষণ পর পর গুলি আর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইউক্রেন সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন হাজার হাজার বেসামরিক লোক।
ইউক্রেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যুদ্ধে এ পর্যন্ত ১৯৮ জন নিহত এবং দেড় হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। রাশিয়া দাবি করেছে, তারা মেলিটপোল শহর দখল করে নিয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেন সেনাদের দাবি, রাশিয়ার সাড়ে ৩ হাজার সেনাকে হত্যা এবং ২০০ জনকে বন্দি করেছে তারা। পেন্টাগন কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, আগ্রাসী অভিযান শুরুর পর রাশিয়ার কিছুটা গতি কমেছে। কারণ সীমান্তে ঢুকে পড়া যত সহজ, শহর দখল ততটাই কঠিন। তবে ক্ষণে ক্ষণে যুদ্ধের পরিস্থিতি পালটাচ্ছে বলেও সতর্ক করেছেন তারা।
এদিকে দুই পক্ষের কাছ থেকে আলোচনা ও অস্ত্রবিরতির খবরও পাওয়া যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করতে পারে ইসরাইল। দেশটিতেই দুই পক্ষ আলোচনায় বসতে পারে। তবে আত্মসমর্পণের গুজব উড়িয়ে দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, আমরা পালিয়ে যাইনি। অস্ত্রও ছাড়িনি। দেশকে রক্ষা করব আমরা। ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ ২৮টি দেশ। খবর বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ানসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।
সকাল থেকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের নানা প্রান্ত থেকে বিস্ফোরণ আর গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসে। কিয়েভের ত্রোইয়েশনিয়া ও ময়দান স্কয়ারের কাছে সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ হয়েছে। এরপর সারা দিনই এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কিয়েভে রাশিয়ার কামান হামলার শব্দ এত বেশি যে, শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে কয়েক মাইল দূরেও শব্দ শোনা যাচ্ছে। শহরের চিড়িয়াখানা ও শুলিভাকা এলাকায় অর্ধশতাধিক বিস্ফোরণ হয়েছে। কিয়েভের পেরেমোহি অ্যাভিনিউয়ে গাড়ির ধ্বংসাবশেষ এবং বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ভাসিলকিভের একটি বিমানঘাঁটির কাছে প্রচণ্ড লড়াই হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, রুশ সেনারা কিয়েভে হামলায় এই ঘাঁটি ব্যবহারের চেষ্টা করছে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী দাবি করে, কৃষ্ণসাগর উপকূলীয় শহর মাইকোলাইভ থেকে রাশিয়ান সেনাদের সফলভাবে তাড়িয়ে দিয়েছে তারা। ইউক্রেনের স্টেট স্পেশাল সার্ভিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কিয়েভে ত্রোইয়েশনিয়া জেলায় সিএইচপি-৬ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে দুই পক্ষের সেনাদের লড়াই চলছে। রাশিয়ার সেনারা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করে দিয়ে রাজধানী কিয়েভ অচল করে দেওয়ার লক্ষ্যে সেখানে এমন হামলা চালাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তারা আরও জানায়, রাজধানী কিয়েভে একটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। তবে তারা সেটি প্রতিহত করেছে। তারা আরও বলেছে, ওডেসা বন্দরের কাছে বাণিজ্যিক দুটি জাহাজে রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি-ভিডিওতে দেখা যায়-দুপক্ষের সেনারা অস্ত্র তাক করে সতর্ক অবস্থানে আছেন। কোথাও রুশ বাহিনীর গোলায় বিধ্বস্ত ভবনে চলছে উদ্ধার তৎপরতা। অস্ত্র হাতে লড়াইয়ে নেমেছেন বাসিন্দারা। একটি শহরে রুশ সেনার সঙ্গে এক নারীকে তর্ক করতেও দেখা যায়। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, চলন্ত প্রাইভেট কার পিষে দিচ্ছে একটি রুশ ট্যাংক।
এক শহর দখলে নিল রাশিয়া : রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনের দক্ষিণের জাপোরিঝঝায় অঞ্চলের মেলিটপোল শহর দখল করেছে। মেলিটপোল দেশটির একটি মাঝারি আকারের শহর। ইউক্রেনের প্রধান বন্দরগুলোর একটি মারিওপোলের কাছেই মেলিটপোলের অবস্থান। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় রাশিয়ার সেনাদের একটি দল কোনো প্রতিরোধ ছাড়া মেলিটপোলে ঢোকে। শহরে টহলরত রুশ সেনাদের স্বাগত জানায় বাসিন্দারা। প্রাপ্তবয়স্ক অনেকে লাল পতাকা নিয়ে রাস্তায় নামেন।
রাশিয়ার ৩৫০০ সেনা হত্যার দাবি ইউক্রেনের : ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী তাদের ফেসবুক পেজে দাবি করে, তারা আগ্রাসনে জড়িত ৩ হাজার ৫০০ রুশ সেনাকে হত্যা এবং প্রায় ২০০ জনকে বন্দি করেছে। এছাড়া এ পর্যন্ত রাশিয়া ১৪টি যুদ্ধবিমান, ৮টি হেলিকপ্টার ও ১০২টি ট্যাংক হারিয়েছে। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর এখন পর্যন্ত নিজেদের কত সেনা হতাহত হয়েছে, সে সম্পর্কে রাশিয়া এখনো কিছুই জানায়নি।
আমরা দেশকে রক্ষা করব-জেলেনস্কি : শুক্রবার থেকে গুঞ্জন উঠতে শুরু করে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। শনিবার টুইটারে একটি ভিডিওতে এমন গুজব উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। ভিডিওতে দেখা যায়, কিয়েভের রাস্তায় সাদামাটা পোশাকে হাঁটছেন জেলেনস্কি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বাসভবন গরোদেৎস্কি হাউজের সামনের ওই ভিডিওতে জেলেনস্কিকে বলতে শোনা যায়, ‘অনলাইনে অনেক ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে, আমি নাকি সেনাবাহিনীকে অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দিয়েছি এবং নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু আমি এখানেই আছি। আমরা অস্ত্র ছাড়ব না। দেশকে রক্ষা করব।’
ইউক্রেন সীমান্তে ৫০০ সেনা পাঠাচ্ছে ফ্রান্স : ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর ন্যাটো জোটের অংশ হিসাবে ইউক্রেন সীমান্ত লাগোয়া রোমানিয়ায় ৫০০ সৈন্য মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্স। শুক্রবার ফ্রান্সের সেনাপ্রধান থিয়েরে বুরখারদ দেশটির সংবাদমাধ্যমের কাছে এ তথ্য জানান। বুরখারদ বলেন, কৌশলগত সার্বভৌমত্বের বিষয়টি স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য রোমানিয়ায় অবস্থানরত সৈন্যের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ন্যাটো।
আলোচনায় প্রস্তুত দুই পক্ষ : রাশিয়ার সঙ্গে অস্ত্রবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত আছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। আলোচনার জন্য সম্ভাব্য তারিখ ও ভেন্যু ঠিক করা নিয়ে ক্রেমলিনের সঙ্গে কথা বলছে কিয়েভ। স্থানীয় সময় শনিবার এক ফেসবুক পোস্টে জেলেনস্কির মুখপাত্র সের্গি নিকিফোরভ বলেন, ‘আমরা আলোচনায় অস্বীকৃতি জানিয়েছি বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা ঠিক নয়। অস্ত্রবিরতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আলোচনায় ইউক্রেন আগেও প্রস্তুত ছিল, এখনো আছে।’ নিকিফোরভ আরও দাবি করেন, আলোচনার তারিখ ও ভেন্যু নির্ধারণ নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে আলাপ চলছে। ইসরাইলে নিয়োজিত ইউক্রেনের দূত ইউজিন করনিচাক আভাস দিয়েছেন, ক্রেমলিনের সঙ্গে কিয়েভের আলোচনায় মধ্যস্থতা করতে পারে তেল আবিব। নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেন, ‘তারা (ইসরাইল) না বলেনি। তারা বোঝার চেষ্টা করছে যে দাবার বোর্ডে তাদের অবস্থানটা কোথায়। আমরা বিশ্বাস করি, এ বিশ্বে ইসরাইলই একমাত্র গণতান্ত্রিক দেশ, যার সঙ্গে ইউক্রেন ও রাশিয়া দুই দেশেরই দারুণ সম্পর্ক রয়েছে।’
ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেনসহ ২৮ দেশ : রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেনসহ ২৮ দেশ। এছাড়াও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ও অন্যান্য মিলিটারি সহায়তা দেবে দেশগুলো। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে জরুরি অস্ত্র সহায়তা দিতে একটি ৬০০ মিলিয়ন ডলারের স্মারকে সই করেছেন। এতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে কোনো ধরনের আইনের বাধ্যবাধকতা ছাড়াই জরুরি ভিত্তিতে ইউক্রেনকে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বাইডেন। বাকি ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সহায়তা প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রতিরক্ষা আইনের ধারা ও সেবার অধীনে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
গতি কমল রুশ বাহিনীর : পেন্টাগন কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, মাথার ওপরে থাকা যুদ্ধবিমানের সুরক্ষা আর ট্যাংক-কামান নিয়ে অন্য দেশের সীমান্তে ঢুকে পড়া যত সহজ, শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং জীবন দিতে প্রস্তুত লোকজনের সমন্বয়ে গঠিত সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করা ততটাই কঠিন। রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনে সর্বাত্মক যুদ্ধে নামার পর খুব দ্রুতই যুদ্ধের কঠিন অংশটুকু সামনে চলে আসায় তাদের গতি কমেছে। রাশিয়া এখনো জনবহুল কোনো শহর দখলে নিতে পারেনি বলেও জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এ যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
‘আগ্রাসনকারী’কে রুখতে রাজনৈতিক সহায়তা দিন, মোদীকে ফোন করে আর্জি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের
রাষ্ট্রপুঞ্জে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি ভারত। রাশিয়ায় বিরুদ্ধে আনা ওই প্রস্তাবের পক্ষে ১১টি ভোট পড়ে। ভারত ছাড়াও চিন এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি।
ইউক্রেনে পুরোদস্তুর যুদ্ধ চলছে। এর মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। দু’জনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ ফোনে কথা হয়। ফোনালাপ শেষ হওয়ার পর এ বিষয়ে জানিয়ে টুইট করেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। টুইটে তিনি লেখেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁকে আগ্রাসনের প্রকৃতি সম্বন্ধে অবগত করেছি। এক লক্ষেরও বেশি বহিরাগত আমাদের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছে। তারা আমাদের নাগরিকদের বাড়ি তাক করে গুলিবর্ষণ করছে। আমি তাঁকে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে রাজনৈতিক সহায়তা দেওয়ার আবেদন জানিয়েছি। তাঁর কাছে একসঙ্গে আগ্রাসনকারীকে প্রতিরোধের আবেদন রেখেছি।’
রাষ্ট্রপুঞ্জে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি ভারত। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে আমেরিকা এবং তার সহযোগী রাষ্ট্রগুলির আনা ওই প্রস্তাব ঘিরে ভোটাভুটিতে অংশ না নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন, ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টি এস তিরুমূর্তি। রাশিয়ায় বিরুদ্ধে আনা ওই প্রস্তাবের পক্ষে ১১টি ভোট পড়ে। ভারত ছাড়াও চিন এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি। তবে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাশিয়া ভেটো প্রয়োগ করায় প্রস্তাবটি পাশ হয়নি নিরাপত্তা পরিষদে।
জানুয়ারির শুরুর দিকে রাশিয়া–ইউক্রেন ইস্যুতে উত্তেজনা যখন চরমে, সে সময় কৃষ্ণসাগর ছেড়ে যায় ন্যাটোর সদস্যদেশ ফ্রান্সের একটি যুদ্ধজাহাজ।
কৃষ্ণসাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশিতে এ মুহূর্তে রুশ যুদ্ধজাহাজ টহল দিচ্ছে। তবে সেখানে পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোর কোনো উপস্থিতি নেই।
কৃষ্ণসাগরে বিদেশি জাহাজের চলাচলের খবরাখবর প্রকাশক তুরস্কের ওয়েবসাইট টার্কিশনেভি ডটনেট বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোটের কোনো জাহাজ সেখানে নেই। সংস্থাটির তথ্য বলছে, কৃষ্ণসাগরে এখন রাশিয়ার নৌবাহিনীর ১৬টি সামরিক নৌযান টহল দিচ্ছে।
কৃষ্ণসাগরে রাশিয়াকে মোকাবিলায় পশ্চিমাদের অবস্থান নিয়ে কূটনীতিক, গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও ন্যাটোর কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজন বিশ্লেষক জানিয়েছেন, এই সাগরে রুশ নৌবাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করার বিষয়ে ন্যাটো সদস্যদেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। ফলে এ অঞ্চল নিয়ে ন্যাটোর একটি পরিষ্কার ও অর্থপূর্ণ কৌশলের ঘাটতি দেখা গেছে।
তবে বৃহস্পতিবার এই জোটের প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ইউরোপের উত্তরাঞ্চল থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত ন্যাটোর ১২০টির বেশি যুদ্ধজাহাজ ও এক শর বেশি যুদ্ধবিমান উচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে।
এদিকে কৃষ্ণসাগরে ন্যাটো সেনাদের দেখা না গেলেও, এ সাগরসংলগ্ন দেশ রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ায় এবং ইউক্রেনের লাগোয়া স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরিতে প্রায় চার হাজার সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে জোটটির। পোল্যান্ড ও রোমানিয়ায় প্রায় তিন হাজার সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রও।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষক স্টিফেন ফ্লানাগান বলেন, ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার সেনাদের উপস্থিতি ও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রুশ নৌবহরের আধুনিকায়নের ফলে কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে সামরিক ভারসাম্য রাশিয়ার অনুকূলে গেছে। এ মুহূর্তে কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার বড় যুদ্ধজাহাজগুলো অবস্থান করছে। এর ফলে ইউক্রেনে হামলার ক্ষেত্রে রুশ বাহিনী ভয়ানক হয়ে উঠেছে।
কৃষ্ণসাগর এলাকায় সেনাও মোতায়েন করেছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে পুরোদমে হামলা শুরুর আগেই কৃষ্ণসাগর ও ইউক্রেন সীমান্তজুড়ে দেড় লাখের বেশি রুশ সেনা মোতায়েন করা হয় বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট শুরু মূলত ন্যাটোকে ঘিরে। ন্যাটোতে যোগ দিতে দীর্ঘ সময় ধরে তৎপর ইউক্রেন। এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল মস্কো। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিলে তা তার নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
ইউরোপের ২৭ দেশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে কোনো সাড়া পেলেন না ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। রুশ আগ্রাসনের মুখে সামরিকভাবে অনেকটা একা লড়াই করতে হচ্ছে তাকে।
তিনি বলেন, কারও কাছ থেকে তিনি সহায়তা চেয়ে পাননি। তবে তিনি রাশিয়াকে ভয় পান না।
হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রুশ আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ নিয়ে কথা ২৭ দেশের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে তারা নীরবতা পালন করেছে।
‘I have asked 27 European leaders whether Ukraine will be in NATO …. Everyone is afraid, no one answers,’ Ukrainian President Volodymyr Zelenskiy said in a late night speech https://t.co/Tco566qKpIpic.twitter.com/LZFRh6WM7f
গভীর রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, সামরিক জোটে ইউক্রেনের সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য ২৭ জন ইউরোপীয় নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন কিন্তু কেউ ইতিবাচক উত্তর দেয়নি।
জেলেনস্কি বলেন, আমি ২৭ জন ইউরোপীয় নেতাকে জিজ্ঞাসা করেছি ইউক্রেন ন্যাটোতে থাকবে কি না… সবাই ভয় পায়, কেউ উত্তর দেয় না।
ইংল্যান্ডেরন ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির বোটানিক্যাল গার্ডেনের ‘নিউটন আপেল গাছ’টি ঝড়ে উপড়ে গেছে। যে আপেল গাছের নিচে বসে নিউটন মধ্যাকর্ষণ সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন উপড়ে যাওয়া গাছটি ছিলো সেটির ক্লোন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এখবর জানিয়েছে।
বাগানের কিউরেটর ড. স্যামুয়েল ব্রকিংটন জানান, এই গাছটি ১৯৫৪ সালে রোপন করা হয়েছিল। ৬৮ বছর ধরে বাগানের ব্রুকসাইড প্রবেশ পথে দাঁড়িয়েছিল। তিনি আরও জানান, গাছটিরও একটি ক্লোন রয়েছে। শিগগিরই বাগানের অন্য স্থানে তা রোপন করা হবে।
যে মূল গাছ থেকে আপেল পড়ার ঘটনায় নিউটন মধ্যাকর্ষণ সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন তা লিংকনশায়ারের গ্রান্থামের উলসথর্প ম্যানরে অবস্থিত ছিল। ১৯ শতকের একটি ঝড়ে গাছটি উপড়ে গেলেও তা বেঁচে যায় এবং কলম করে গাছটির বংশ বিস্তার করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি ছিল একটি চারা অন্য অঙ্কুরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া।
বাগানের অন্য কোনও স্থানে রোপন করা হবে নিউটনের আপেল গাছের ক্লোন।
ড. স্যামুয়েল ব্রকিংটন জানান, পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বোটানিক্যাল গার্ডেনের একটিসহ ক্যামব্রিজে নিউটনের মূল আপেল গাছের তিনটি ক্লোন রয়েছে।
তিনি আরও জানান, শুক্রবারের ঝড়ে এটির উপড়ে যাওয়া দুঃখজনক হলেও মধু ছত্রাকের উপস্থিতির কারণে গাছটির পরিণতি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তাই তারা গাছটির ক্লোন করা শুরু করেন।
তার কথায়, অভাবনীয় কলম বিজ্ঞানের কারণে নিউটনের আপেল গাছ আমাদের সংগ্রহে থাকবে বলে আমরা আশা করছি।
ইউক্রেন নিয়ে পুতিনের চিন্তাভাবনা সৃষ্টির মতো অনেক ভারতীয়ের জানা নেই। কেন পড়তে ইউক্রেনে গিয়েছিলেন, সেই প্রশ্নও মাথায় ঘুরছে অনেকের।
ঠিক মতো খাবার নেই। জলও পান করতে হচ্ছে ভেবে-চিন্তে। পরিমিতভাবে। কখন কোথায় আশ্রয় নিতে হবে, তারও ঠিক-ঠিকানা নেই। আছে শুধু ভয় আর অনিশ্চয়তা। বেঁচে ঠিক ভাবে দেশে ফিরতে পারব তো? এই আশঙ্কা নিয়েই দিন কাটছে ইউক্রেনের খারকিভে আটকে থাকা ভারতীয় পড়ুয়া সৃষ্টি গর্গের।
ঝাড়খন্ডের জামশেদপুরের বাসিন্দা সৃষ্টি খারকিভের মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার পর থেকেই প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া সৃষ্টির ঠাঁই হয়েছে মিলিটারি বাঙ্কারে পরিণত করা নিকটবর্তী মেট্রো স্টেশনে। সেখানেই উৎকণ্ঠা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত কেটেছে সৃষ্টির। সকাল হতে ফের খাদ্য, জল এবং অন্যান্য রসদের চাহিদায় নিজের বাসায় ফিরেছেন তিনি। তবে জানেন না আবার কখন ছুটতে হবে অনিশ্চয়তার পথে।
আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলার সময় সৃষ্টি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার এখানে বোমাবর্ষণ হয়েছে। সারা দিন-সারা রাত মেট্রো স্টেশনে কাটিয়ে ক্লান্ত। জানি না কখন আবার লুকোতে ছুটতে হবে। এত শক্তি নেই যে আবার মেট্রোতে ফিরে যাবো। এ কটুও কথা বলতে পারছি না। তাই যাওয়ার আগে একটু বিশ্রাম করে নিতে চাইছি।’’ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রাণ বাঁচাতে যে যেখানে খুশি মরিয়া হয়ে ছুটছে এবং নিকটবর্তী মেট্রো বাঙ্কারে গিয়ে লুকিয়ে পড়ছে বলেও জানান সৃষ্টি। খাবার এবং জলও নিজেদেরই জোগাড় করতে হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
বাঙ্কারে টিভি দেখার কোনও ব্যবস্থা নেই। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াচ্ছে, তা জানতে হাতে থাকা মোবাইলই নিত্যসময়ের ভরসা সৃষ্টির মতো বাঙ্কারে আশ্রয় নেওয়া ভারতীয়দের। সৃষ্টি বলেন, ‘‘মোবাইল সাইলেন্টে রাখতে পারছি না। সারাদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আসছে। বারবার ব্যাটারি ফুরিয়ে আসছে। কথা বলতেও খুব কষ্ট হচ্ছে।’’
বৃহস্পতিবার ভারতীয় দুতাবাসে ১০-১৫ বার করে ফোন করেন সৃষ্টি। দুতাবাসের তরফ থেকে ভারতে ফেরানোর আশ্বাস দেওয়া হলেও কবে ফেরানো হবে, তা নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাই সমস্ত ভারতীয়েরা একসঙ্গে দলবদ্ধভাবে থাকার চেষ্টা করছেন। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কাউকে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না বলেও আনন্দবাজারের সঙ্গে কথা বলার সময় জানান সৃষ্টি।
ইউক্রেন নিয়ে পুতিনের চিন্তাভাবনা সৃষ্টির মতো অনেক ভারতীয়ের জানা নেই। তবে ভারতে ফেরার ইচ্ছে প্রবল। কেন পড়তে ইউক্রেনে গিয়েছিলেন, সেই প্রশ্নও মাথায় ঘুরছে অনেকের। তার মাঝেই সৃষ্টিরা জানে এই মুহূর্তে সব থেকে দরকারি প্রাণ বাঁচানো। তার জন্য লাগবে নিজের এবং মোবাইলের জীবনীশক্তি। তাই ফোন রাখার আগেও তার শেষ কথা একটাই, ‘‘সত্যিই আর কথা বলতে পারছি না। ফোনের ব্যাটারিও ফুরিয়ে যাচ্ছে। একটু বিশ্রাম নিতে চাই।’’